শিরোনাম:

অভিন্ন একক-অঙ্কের ভ্যাট হার চালুর আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই

অভিন্ন একক-অঙ্কের ভ্যাট হার চালুর আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই

ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অভিন্ন একক-অঙ্কের ভ্যাট হার এবং নামমাত্র এক শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে।

ডিসিসিআই বলেছে, এই ধরনের হার সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনবে, ব্যবসা করার ব্যয় হ্রাস করবে এবং উৎপাদন খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ডিসিসিআই আরও বলেছে, বর্তমানে ভ্যাট হার সর্বত্র ১৫ শতাংশ। তবে এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ, ৭.৫ .শতাংশ এবং ৫ শতাংশের মতো বিভিন্ন স্ল্যাব বিভক্ত করা হয়েছে যা আসলে ব্যবসায়ীদের জন্য অসুবিধার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে বিরোধের কারণ হয়েছে। এছাড়াও, ইনপুট ট্যাক্স রিবেট সুবিধা না পাওয়ার কারণে অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত করের বোঝা বহন করছেন।

ডিসিসিআই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ এনবিআর ভবনে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের কাছে চেম্বারের বাজেট (২০২৫-২৬) প্রস্তাব পেশ করার সময় ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ এই প্রস্তাবগুলো জমা দেন।

তাসকিন আহমেদ মোট ৪২টি বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন, যার মধ্যে কর জাল সম্প্রসারণ ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, করের হার হ্রাস, ব্যবসা-বান্ধব কর নীতি প্রবর্তন ও রাজস্ব ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণ, ভ্যাট ব্যবস্থাপনা সংস্কার, স্থানীয় শিল্প ও উৎপাদন খাত রক্ষা এবং আমদানি শুল্ক, শুল্ক ব্যবস্থা ও ব্যক্তিদের জন্য কর কাঠামো সহজীকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ আগামী অর্থবছর থেকে সকল করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রক্রিয়ার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এনবিআরকে অভিনন্দন জানান।

তিনি উলে¬খ করেন, এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এক কোটি এক লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি টিআইএনধারী রয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৩৭ লাখ টিআইএনধারী তাদের রিটার্ন জমা দিয়েছে।

ডিসিসিআই সভাপতি করদাতা বৃদ্ধি এবং কর জাল সম্প্রসারণের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

তাসকিন আহমেদ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইনে তাদের কর রিটার্ন দাখিল করতে সহায়তা করার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় কর রিটার্ন ব্যবস্থা চালু করার আহ্বান জানান। তিনি বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি ও জনসাধারণের ওপর এর বোঝা বিবেচনা করে, ব্যক্তিদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করার অনুরোধ করেন।

এছাড়াও, ডিসিসিআই সভাপতি বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর ধীরে ধীরে হ্রাস এবং আমদানি পর্যায়ে উৎপাদকদের জন্য বিদ্যমান অগ্রিম কর ধীরে ধীরে বাতিল করার প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত শুল্ক মূল্য ও বাজার মূল্যের মধ্যে পার্থক্যের কারণে ব্যবসায়ীদের প্রকৃত আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে, যা ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি প্রক্রিয়াকে জটিল ও ব্যয়বহুল করে তুলছে।

এই প্রসঙ্গে, তিনি শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত শুল্ক মূল্যের পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, এনবিআর বাণিজ্য-সম্পর্কিত রাজস্ব নীতিমালার ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সংস্কারের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বদ্ধপরিকর।

তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ড কর ব্যয় মোকাবেলার চেষ্টা করবে। তিনি আরও বলেন, ‘একাংশ মানুষ কর দিচ্ছে এবং অন্যরা দিচ্ছে না, এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি এক লাখ ৪০ হাজার। গত দশ বছরে টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে করদাতার সংখ্যা সেই তুলনায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বৃদ্ধি পায়নি, যা হতাশাজনক।

রহমান আরও বলেন, এনবিআর শিগগিরই কর্পোরেট ট্যাক্স রিটার্ন সিস্টেম সম্পূর্ণ অনলাইনে আনার জন্য কাজ করছে এবং এটার করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান অভিমত প্রকাশ করেন, দীর্ঘমেয়াদে কর্পোরেট সংস্কৃতির অধীনে ব্যক্তি উদ্যোগগুলোকে ধীরে ধীরে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার পরিবেশ তৈরি করার জন্য কর্পোরেট করের হার হ্রাস করা প্রয়োজন।

ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাট হার সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারলে বিভিন্ন স্ল্যাব বজায় রাখার পরিবর্তে সরকার ভ্যাট হার একক অঙ্কে আনতে আগ্রহী।

তিনি আরও বলেন, তবে এজন্য ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা অপরিহার্য।

তিনি প্রস্তাব করেন যে এ লক্ষ্যে এনবিআর স্থানীয় আইটি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সমন্বিত সফ্টওয়্যার তৈরি করতে পারে যা ব্যবহার করে সকলেই অনলাইনে সহজে অ্যাকাউন্টিং, অডিট এবং ভ্যাট ও আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনও ঝামেলা ছাড়াই সম্পন্ন করতে পারে।

এই প্রস্তাবিত সফটওয়্যারটি ওয়েব-ভিত্তিক মাধ্যমে তৈরি করা যেতে পারে এবং এই সিস্টেমের মাধ্যমে এনবিআর টিআইএন ও বিআইএনধারীদের ডাটাবেজেও অ্যাক্সেস পাবে।
রহমান আরও বলেন, এনবিআর আগামী অর্থবছরে কর ছাড় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উদার হওয়ার চেষ্টা করবে।

ডিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মো. সালেম সুলাইমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করলে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

অভিন্ন একক-অঙ্কের ভ্যাট হার চালুর আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ করা না হলে আগামী শনিবার (২৮ জুন) থেকে রাজস্ব বোর্ডের সব দপ্তর লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছে সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা এই ঘোষণা দেন।

আবদুর রহমানকে আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী আমলা আখ্যা দিয়ে মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, দেশ ও রাজস্ব ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে আবদুর রহমান খান। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এনবিআরের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।

তারা বলেন, ইতোমধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবির এই আন্দোলনকে বাধা দিতে গতকাল রোববার আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। এর মধ্যে দুজন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের, একজন এনবিআর বোর্ড অফিসের এবং বাকি দুজন ঢাকা ও কুমিল্লা কর অঞ্চলের। এ ধরনের বদলির তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে আন্দোলনের থামাতো এই ধরনের বদলি বন্ধেরও দাবি করেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনবিআরের প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ আজ সোমবারের মধ্যে বাতিল না করা হলে আগামীকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকাস্থ কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি এবং ঢাকার বাইরে নিজ নিজ দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি, কলমবিরতি এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে। এছাড়া প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ বাতিল না করা হলে এবং এ ধরনের নতুন কোনো বদলি আদেশ জারি করা হলে আগামী ২৫ ও ২৬ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে কলমবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৭ জুনের মধ্যে এসব বদলি আদেশ বাতিল না হলে ২৮ জুন থেকে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে বলা হয়েছে।

এর আগে আজ সকালে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাফনের কাপড় পরে তিনঘণ্টা (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত) কলম বিরতিরসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। এসময় সংস্থাটির বিভক্ত করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ তৈরিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্ব রাখার জোরদাবি রাখেন। কর্মসূচিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছে, অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এনবিআর চেয়ারম্যানকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণাটি থাকবে।

গত মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে অধ্যাদেশ জারির পর তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচিতে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে সরকার পিছু হটে। বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পরে কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি বজায় রাখেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি স্বাভাবিক কাজে ফিরলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি নেওয়া হলেও তাদেরকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছেন রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রার রামজীবন কুন্ডু

অভিন্ন একক-অঙ্কের ভ্যাট হার চালুর আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই

রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছেন রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রার রামজীবন কুণ্ডু। মাত্র ৬ বছর বয়সেই তিনি পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার (মুজিবনগর কর্মচারী) সনদ! ওই সনদে তিনি চাকরি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার জন্মসনদ অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন ৬ বছরের শিশু। প্রকৃতপক্ষে ‘মুজিবনগর কর্মচারীর’ জাল সনদ দিয়ে এখন পর্যন্ত সাবরেজিস্ট্রার পদে চাকরি করে যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, তার পথ ধরেই দেশে এখন ৩৯ জন সাবরেজিস্ট্রার বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কর্মরত আছেন। এই চাকরির সুবাদে রামজীবন কুণ্ডু কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ করেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের সংসদ-সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ সেনের ভাগ্নি জামাতা বলে পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ের সূত্রে এবং রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। প্রতিটি দলিল সম্পাদনের জন্য তাকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ঘুস দিতে হতো। রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিদিন এক থেকে দুই শতাধিক দলিল রেজিস্ট্রি হয়। এতে দেখা যায় তিনি প্রতিদিন দলিল সম্পাদন বাবদ প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ঘুস নিতেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার সহকর্মীরা জানান, তিনি রংপুর নগরীর আরএমসি মার্কেটের সামনে ৮ তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকার ওপরে। রাজারহাটে নিজ গ্রামে জমি কিনেছেন, যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকার বেশি। ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। রংপুর ধাপ চেকপোস্ট সড়কে তার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। নামে-বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

প্রতিদিন সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ঘুসের টাকা বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য রনি নামে একজনকে তিনি তার অফিসে নিজের চেয়ারের পাশে কম্পিউটার দিয়ে বসিয়ে রাখতেন। রনি টাকার হিসাব রাখত। সে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারী নয়। বাসা পর্যন্ত ঘুসের টাকা পৌঁছে দিত রনি নিজেই। এজন্য তাকে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন সাবরেজিস্ট্রার। আর এই সুযোগে রনি নিজেই ধাপ সাগর পাড়ায় ৫ তলা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। তার একাধিক মাইক্রোবাস রয়েছে বলেও জানা গেছে।

জন্ম সদনে রামজীবন কুণ্ডুর জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১৯৬৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৬ বছরেরও কম। এরপরও তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ হিসাবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে চাকরি করছেন। তার এই জাল সনদের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ হিসাবে ২০০৯ সালে ১৯০ জনকে সাবরেজিস্ট্রার পদে আত্তীকরণ করা হয়েছিল উচ্চ আদালতের নির্দেশে। তাদের মধ্যে ১৯৬৮, ১৯৬৭, ১৯৬৬, ১৯৬৫ সালে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরাও ছিলেন। যাদের বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র ৩ থেকে ৬ বছর ছিল।

জালিয়াতির মাধ্যমে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া নিয়ে তখন নিবন্ধন দপ্তরসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। কারণ মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। ওই সরকারের কর্মচারী হতে হলে তাদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্মসাল হওয়া দরকার ১৯৫২ অথবা তার পূর্বে। কিন্তু নিয়োগ পাওয়াদের সবারই জন্ম তারিখ ছিল ১৯৫৩ সালের পরে। এর মধ্যে ১৩৮ জনের বয়সই ছিল ১০ বছরের নিচে। আর ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সালে জন্ম তারিখ আছে এমন সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ জন। মূলত ’৬৪ সালের পর যাদের জন্ম দেখানো হয়েছিল তাদের ৩৯ জনই এখন কর্মরত রয়েছেন এবং আগামী বছর তারা অবসরে যাবেন।

জানা যায়, ২০০৯ সালে মুজিবনগর কর্মচারীর কোটায় সাবরেজিস্ট্রারের চাকরি পাওয়ার আগে রামজীবন কুণ্ডু কুড়িগ্রামের রাজারহাটে একটি প্রাইভেট কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।)

হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টে ভুল তথ্যের অভিযোগ, দুদকের সতর্ক বার্তা

অভিন্ন একক-অঙ্কের ভ্যাট হার চালুর আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে ভুল ও যাচাইবিহীন তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের দাবি, ওই পোস্টে দুদকের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় দুদক।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি পোস্ট কমিশনের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন।

এ বিষয়ে সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে একটি প্রতারক চক্র দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। যার সাথে দুদকের কর্মকর্তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। দুদক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, ইতোপূর্বে দুদক প্রতারণা রোধে সবাইকে সতর্ক করে আসছে, যা বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরূপ প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদককে দোষারোপ করে যার ফলে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তির শেষ অংশ দুদক জানায়, প্রতারণামূলক ফোন কল, বার্তা বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে কারও কাছ থেকে টাকা চাওয়া হলে কিংবা কোনো প্রতারণা বা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেলে দুদকের টোল ফ্রি হটলাইন-১০৬ নম্বরে জানানোর অথবা নিকটস্থ দুদক কার্যালয় বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।