শিরোনাম:

আশরাফুলের কাছে খাবার খেতে আসা ৩০০ কবুতরের ঠিকানা জানেনা কেউ

আশরাফুলের কাছে খাবার খেতে আসা ৩০০ কবুতরের ঠিকানা জানেনা কেউ

বাকবাকুম, বাকবাকুম শব্দে মুখর সবজির বাজারে ৩০০ কবুতরের ঠিকানা জানেনা কেউ । ছবি : বাসস

সবজি ব্যবসায়ী আশরাফুলের কাছে ব্যাপারটি অভাবনীয় এবং অপ্রত্যাশিতও। তিনি কখনও কবুতর পালন করেননি বা পালন করার চিন্তাও করেন নি। কিন্তু কোন অদৃশ্য কারণে তার দোকানের সামনের উঠোনে প্রতিদিন দুপুরের খাবার খেতে আসে ২০০ থেকে ৩০০ কবুতর। তিনিও গভীর আনন্দে এসব কবুতরকে খাবার খেতে দেন।

জেলার বিরামপুর পৌর এলাকার পুরাতন বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম (৫৫)। আট বছর ধরে অভাবনীয় এই ঘটনার অংশী হিসেবে এলাকাবাসীর কাছে প্রকৃতিপ্রেমী আশরাফুল নামেই পরিচিত।

বাসসের সাথে আলাপকালে আশরাফুল আলম বলেন, আট বছর আগে তার দোকানের বারান্দায় এসেছিল একটি অচেনা কবুতর। কবুতরটিকে তিনি খেতে দেন । পরদিন একই সময়ে দোকানে আসে ৩টি কবুতর। ওই ৩টি কবুতরকেও তিনি খেতে দেন। এর পর থেকে দোকানের সামনে ও বারান্দায় বাড়তে থাকে কবুতরের সংখ্যা। এখন প্রতিদিন দুপুর দেড়টা বাজলেই দুই থেকে তিন শতাধিক কবুতর এখানে এসে হাজির হয়। খাবার ছিটিয়ে দিলে আগত কবুতরগুলো খাবার খেয়ে আবার চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনই এমন দৃশ্য দেখা যায় আশরাফুলের দোকানের সামনে। তিনি এসব কবুতরকে প্রতিদিন নিয়ম করে দুপুরের খাবার হিসেবে গম খাওয়ান। কবুতরগুলো কোথা থেকে আসে, তা কেউ জানে না। তবে কবুতরগুলোকে খাবার দিয়ে তিনি আনন্দ পান। এসব কবুতরকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন তাকে দুই থেকে তিন কেজি গম ছিটাতে হয়। কবুতরগুলো টিনের চালে ঝাঁকে ঝাঁকে এলে কখনো আশরাফুল নিজে খাবার দেন। আবার কখনো দোকানের কর্মচারীরা খাবার দেন। খাওয়া শেষে কবুতরগুলো যে যার মতো চলে যায়।

আশরাফুল বলেন, ‘কবুতরগুলোকে এভাবে খাওয়াতে পেরে মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে, তৃপ্তি পাই।’

তিনি বলেন, ‘সিলেটের হজরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজারে ঝাঁকে ঝাঁকে জালালি কবুতর খাবার খেয়ে উড়ে বেড়ায়। বিষয়টি দেখে কবুতরের প্রতি আমার একটা ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। হয়তো আমার সেই ভালোবাসাটাই কবুতর বুঝতে পেরেছে। তবে সব জীবের প্রতিই আমার মায়া কাজ করে।’

কবুতর ছাড়াও একই সময়ে দোকানের টিনের চালে খাবারের জন্য আসে ২০ থেকে ৩০টি কাক। তাদেরও নিয়ম করে খাবার হিসেবে পাউরুটির টুকরা ছিটিয়ে দেন টিনের চালে। দিনের বিভিন্ন সময় দোকানে খাবার খেতে মা-ছানাসহ আসে চারটি বিড়াল। পাশের আড়তের সবজি ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন আদর করে পুরুষ বিড়ালটির নাম রেখেছেন ‘সম্রাট’। নাম ধরে ডাকলে বিড়ালটি আশরাফুলের দোকানে ছুটে আসে খাবার খেতে। তাদের খাবার হিসেবে দেন পাশের দোকান থেকে কেনা কেক।

বিরামপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, জীবে প্রেম তো নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় কাজ। ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম নিঃস্বার্থভাবে পশুপাখিগুলোকে প্রতিদিন খাবার দিচ্ছেন, সেটি প্রকৃতির প্রতি তার অকৃত্রিম প্রেম। পশু পাখির কাছ থেকে কেউ কোনো স্বার্থ আশা করেন না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশরাফুল আলমের দোকানঘরের টিনের চালের ওপরে জোড়ায় জোড়ায় কবুতর এসে জড়ো হচ্ছে। টিনের চালের ওপরে বিদ্যুতের তারে পূর্ব-পশ্চিম লম্বা সারিতে বসে আছে অনেক কবুতর।

বাকবাকুম, বাকবাকুম শব্দে মুখর সবজির বাজার। আশরাফুলের দোকানের এক কর্মচারী যেই না হাতে খাবারের থলে নিয়ে দোকানের বারান্দায় আসলেন, তখনই কবুতরগুলো তাকে ঘিরে ওড়াউড়ি শুরু করে। খাবার ছিটিয়ে দিলে পাল্লা-পাল্লি করে তা খেয়ে নেয়। তখন বাজারের অন্য দোকানি, ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ মুগ্ধ হয়ে এমন দৃশ্য উপভোগ করেন।

সবজি ব্যবসায়ী মঞ্জু রহমান বলেন, ‘আশরাফুল ভাই এলাকার একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি সারা দিন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন। একটু গুরু গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। তবে ব্যক্তি হিসেবে ভালো। তার পরিবারে স্ত্রী, এক মেয়ে ও তিন ছেলে আছে। তিনি বিরামপুর উপজেলার মামুদপুর গ্রামের মৃত ভরসা মন্ডলের পুত্র।

আশরাফুল বলেন, গত ৮ বছর থেকে আমি অচেনা কবুতরদের খেতে দিচ্ছি। কবুতরগুলোকে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন কেজি গম খেতে দেই। কাকের জন্য আলাদা বাজেট। কাকের জন্য ১০ টাকা দামের পাউরুটি ছিঁড়ে ছোট ছোট করে টিনের চালে ছিটিয়ে দেই। বিড়াল গুলোকে খাবার দেই। এতে সব মিলে দিনে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং মাসে ৩ হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়।

নতুন বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাবলু বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে দেখছি, কবুতরগুলো বাইরে থেকে এখানে আসে। প্রতিদিন দুপুরে আশরাফুল কবুতরগুলোকে খাওয়ান। এটি তার একটি মহৎ কাজ। এখন দুপুরবেলা তার কবুতর খাওয়ানোর এমন দৃশ্য এলাকার উৎসুক লোকজন দূরে দাঁড়িয়ে দেখেন। আশরাফুল প্রকৃাত প্রেমী হিসেবে এলাকায় এখন পরিচিতি পেয়েছে।

নৌবাহিনীর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫ কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন নৌবাহিনী প্রধান

আশরাফুলের কাছে খাবার খেতে আসা ৩০০ কবুতরের ঠিকানা জানেনা কেউ

পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে ধারণ করে ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান-২০২৫’ এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষ্যে বুধবার (২৫-০৬-২০২৫) নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান বানৌজা ঢাকায় গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫’ উদ্বোধন করেন। পরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এ সময় নৌবাহিনী সদর দপ্তরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারগণসহ ঢাকা নৌঅঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নাবিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫’ সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের সকল নৌ ঘাঁটি, স্থাপনা এবং উপকূলীয় এলাকাসমূহে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করছে। নৌবাহিনী প্রধান সবুজ, শ্যামল ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে সকল নৌসদস্যকে বৃক্ষরোপণের আহবান জানান। এছাড়াও তিনি উপকূলীয় অঞ্চলে অধিকহারে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন। উল্লেখ্য, নৌ ঘাঁটি, স্থাপনা ও উপকূলীয় এলাকাসমূহে ফলদ, বনজ ও ভেষজ চারা রোপণের মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করলে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

আশরাফুলের কাছে খাবার খেতে আসা ৩০০ কবুতরের ঠিকানা জানেনা কেউ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ করা না হলে আগামী শনিবার (২৮ জুন) থেকে রাজস্ব বোর্ডের সব দপ্তর লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছে সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা এই ঘোষণা দেন।

আবদুর রহমানকে আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী আমলা আখ্যা দিয়ে মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, দেশ ও রাজস্ব ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে আবদুর রহমান খান। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এনবিআরের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।

তারা বলেন, ইতোমধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবির এই আন্দোলনকে বাধা দিতে গতকাল রোববার আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। এর মধ্যে দুজন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের, একজন এনবিআর বোর্ড অফিসের এবং বাকি দুজন ঢাকা ও কুমিল্লা কর অঞ্চলের। এ ধরনের বদলির তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে আন্দোলনের থামাতো এই ধরনের বদলি বন্ধেরও দাবি করেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনবিআরের প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ আজ সোমবারের মধ্যে বাতিল না করা হলে আগামীকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকাস্থ কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি এবং ঢাকার বাইরে নিজ নিজ দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি, কলমবিরতি এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে। এছাড়া প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ বাতিল না করা হলে এবং এ ধরনের নতুন কোনো বদলি আদেশ জারি করা হলে আগামী ২৫ ও ২৬ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে কলমবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৭ জুনের মধ্যে এসব বদলি আদেশ বাতিল না হলে ২৮ জুন থেকে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে বলা হয়েছে।

এর আগে আজ সকালে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাফনের কাপড় পরে তিনঘণ্টা (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত) কলম বিরতিরসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। এসময় সংস্থাটির বিভক্ত করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ তৈরিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্ব রাখার জোরদাবি রাখেন। কর্মসূচিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছে, অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এনবিআর চেয়ারম্যানকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণাটি থাকবে।

গত মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে অধ্যাদেশ জারির পর তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচিতে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে সরকার পিছু হটে। বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পরে কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি বজায় রাখেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি স্বাভাবিক কাজে ফিরলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি নেওয়া হলেও তাদেরকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছেন রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রার রামজীবন কুন্ডু

আশরাফুলের কাছে খাবার খেতে আসা ৩০০ কবুতরের ঠিকানা জানেনা কেউ

রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছেন রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রার রামজীবন কুণ্ডু। মাত্র ৬ বছর বয়সেই তিনি পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার (মুজিবনগর কর্মচারী) সনদ! ওই সনদে তিনি চাকরি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার জন্মসনদ অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন ৬ বছরের শিশু। প্রকৃতপক্ষে ‘মুজিবনগর কর্মচারীর’ জাল সনদ দিয়ে এখন পর্যন্ত সাবরেজিস্ট্রার পদে চাকরি করে যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, তার পথ ধরেই দেশে এখন ৩৯ জন সাবরেজিস্ট্রার বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কর্মরত আছেন। এই চাকরির সুবাদে রামজীবন কুণ্ডু কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ করেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের সংসদ-সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ সেনের ভাগ্নি জামাতা বলে পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ের সূত্রে এবং রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। প্রতিটি দলিল সম্পাদনের জন্য তাকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ঘুস দিতে হতো। রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিদিন এক থেকে দুই শতাধিক দলিল রেজিস্ট্রি হয়। এতে দেখা যায় তিনি প্রতিদিন দলিল সম্পাদন বাবদ প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ঘুস নিতেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার সহকর্মীরা জানান, তিনি রংপুর নগরীর আরএমসি মার্কেটের সামনে ৮ তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকার ওপরে। রাজারহাটে নিজ গ্রামে জমি কিনেছেন, যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকার বেশি। ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। রংপুর ধাপ চেকপোস্ট সড়কে তার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। নামে-বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

প্রতিদিন সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ঘুসের টাকা বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য রনি নামে একজনকে তিনি তার অফিসে নিজের চেয়ারের পাশে কম্পিউটার দিয়ে বসিয়ে রাখতেন। রনি টাকার হিসাব রাখত। সে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারী নয়। বাসা পর্যন্ত ঘুসের টাকা পৌঁছে দিত রনি নিজেই। এজন্য তাকে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন সাবরেজিস্ট্রার। আর এই সুযোগে রনি নিজেই ধাপ সাগর পাড়ায় ৫ তলা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। তার একাধিক মাইক্রোবাস রয়েছে বলেও জানা গেছে।

জন্ম সদনে রামজীবন কুণ্ডুর জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১৯৬৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৬ বছরেরও কম। এরপরও তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ হিসাবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে চাকরি করছেন। তার এই জাল সনদের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ হিসাবে ২০০৯ সালে ১৯০ জনকে সাবরেজিস্ট্রার পদে আত্তীকরণ করা হয়েছিল উচ্চ আদালতের নির্দেশে। তাদের মধ্যে ১৯৬৮, ১৯৬৭, ১৯৬৬, ১৯৬৫ সালে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরাও ছিলেন। যাদের বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র ৩ থেকে ৬ বছর ছিল।

জালিয়াতির মাধ্যমে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া নিয়ে তখন নিবন্ধন দপ্তরসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। কারণ মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। ওই সরকারের কর্মচারী হতে হলে তাদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্মসাল হওয়া দরকার ১৯৫২ অথবা তার পূর্বে। কিন্তু নিয়োগ পাওয়াদের সবারই জন্ম তারিখ ছিল ১৯৫৩ সালের পরে। এর মধ্যে ১৩৮ জনের বয়সই ছিল ১০ বছরের নিচে। আর ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সালে জন্ম তারিখ আছে এমন সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ জন। মূলত ’৬৪ সালের পর যাদের জন্ম দেখানো হয়েছিল তাদের ৩৯ জনই এখন কর্মরত রয়েছেন এবং আগামী বছর তারা অবসরে যাবেন।

জানা যায়, ২০০৯ সালে মুজিবনগর কর্মচারীর কোটায় সাবরেজিস্ট্রারের চাকরি পাওয়ার আগে রামজীবন কুণ্ডু কুড়িগ্রামের রাজারহাটে একটি প্রাইভেট কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।)