শিরোনাম:

নেত্রকোনায় পুকুরে পুকুরে মিলছে সর্বগ্রাসী সাকার মাছ, আতংকে মাছ চাষিরা

নেত্রকোনায় পুকুরে পুকুরে মিলছে সর্বগ্রাসী সাকার মাছ, আতংকে মাছ চাষিরা

সর্বগ্রাসী সাকার মাছ, আতংকে মাছ চাষিরা। ছবি : বাসস

নেত্রকোনা,হাওর, বাওর, খাল, বিল আর নদীর সংমিশ্রণে মিঠা পানির মাছের বিশাল আশ্রয়স্থল এই জেলা। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন নদী, জলাশয় ও পুকুরে মিলছে সর্বগ্রাসী সাকার মাছ। উদ্ভট রং আর আকৃতির এ মাছ দেখতে উৎসুক জনতা আগ্রহ দেখালেও চিন্তিত স্থানীয় মাছ চাষিরা। জেলার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে স্থানীয় মাছ চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি এ জেলায় আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে সাকার মাছের বৃদ্ধি। ঠিক কোথা থেকে কিভাবে এ মাছ এ জেলায় আসলো তা জানা নেই কারো।

মাছ চাষিরা জানান, এসব মাছ তাদের পুকুরে আসার পর থেকে বিভিন্ন দেশীয় ছোট ছোট মাছের বংশ বৃদ্ধি একেবারেই কমে গিয়েছে এবং অনেক মাছ ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

জেলার সদর উপজেলার উলুয়াটি গ্রামের মাছ চাষি ও তরুণ কৃষক আরিফুর রহমান জানান, তাদের পুকুরে এ মাছের পরিমাণ দিনদিন বেড়েই চলেছে। কয়েকদিন পরপর জাল দিয়ে এ মাছ তুলে মেরে ফেললেও এর পরিমাণ কমছে না। এদিকে সাকার মাছের বিচরণের কারণে দেশীয় চিংড়ি,পুঁটি,বাইলা মাছসহ অনেক ছোট ছোট মাছ হারিয়ে যাচ্ছে পুকুর থেকে।

জানা যায়, সাকার মাছ একটি সর্বগ্রাসী মাছ। এই মাছটি একবার কোনো জলাশয়ে ঢুকে পড়লে এর বিস্তার রোধ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। চাষের পুকুরে এই মাছ ঢুকে পড়লে অন্য মাছের সাথে খাবার ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এতে করে বাইরে থেকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া জলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছের উৎপাদন পাওয়া যায় না।

এ মাছ জলজ পোকামাকড় ও শেওলার পাশাপাশি ছোট মাছ এবং মাছের পোনা খেয়ে থাকে। পাখনা খুব ধারালো হওয়ায় এ মাছের সাথে লড়াই করার সময় ধারালো পাখনার আঘাতে সহজেই অন্য মাছের দেহ ক্ষত-বিক্ষত হয় এবং পরবর্তীতে পচন ধরে সেগুলো মারা যায়। এ মাছ রাক্ষুসে প্রজাতির না হলেও প্রচুর পরিমাণে খাবার ভক্ষণ করে। এতে খাদ্যের যোগান নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা তৈরি হয় অন্য মাছের সাথে। বেশিরভাগ সময়ই দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে জলাশয় থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। জেলায় সাকার মাছ এমন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় মাছ চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর বাসসকে বলেন, ‘সম্প্রতি জেলায় বিভিন্ন স্থানে এ মাছের দেখা মিলেছে এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এ মাছ অনেক প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। এ মাছ জেলার হাওর ও নদীতে ছড়িয়ে গেলে তা এ অঞ্চলের মাছের বংশবৃদ্ধিতে এবং প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’

তিনি আরো জানান, এ মাছের উপদ্রব থেকে দেশীয় মাছের বংশবৃদ্ধি রক্ষায় দেখামাত্রই এ মাছ মেরে ফেলতে হবে। বা কেটে তা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

এ মাছের পুরো নাম ‘সাকার মাউথ ক্যাটফিশ’। অনেকে ‘সাকার ফিশ’ নামে চেনে। বৈজ্ঞানিক নাম ‘হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস’। নেত্রকোনায় স্থানীয়রা একে ‘টাইগার ফিশ’ নামেও চেনেন।

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াটিক স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, এ মাছ মূলত দক্ষিণ আমেরিকার মাছের একটি প্রজাতি যা এখন দক্ষিণ এশিয়ার জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের জলাধার ও নদীতে সাকার মাছের আধিক্য বেড়েছে। এ ছাড়া এটি উত্তর আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে।

এ পর্যন্ত এ মাছের দুটি ধরণ পাওয়া গেছে। একটির রং সাদা ও ছোপ ছোপ দাগ। অপরটি কালো এবং তার উপর সাদা ডোরাকাটা দাগ। বর্তমানে বাংলাদেশের নদ-নদীতে দ্বিতীয়টি ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। এটি সাধারণ একুরিয়ামের জন্য আদর্শ মাছ। একুরিয়াম এর ময়লা খেয়ে বেঁচে থাকে। এই মাছ ময়লাসহ অন্যান্য মাছের খাদ্য খেয়ে থাকে এবং দ্রুত বংশবিস্তার করে থাকে। তাই যে জায়গায় এই মাছ বেশি পরিমাণে থাকে সেই জায়গায় অন্যান্য মাছ কম থাকে। বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদীসহ প্রায় জলাশয়েই মাছটি উল্লেখযোগ্য আকারে দেখা যায়।

মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাকার ফিস উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ায় দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছ খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। এটি চিংড়ি, কালি বাউশ, মাগুর ও শিং মাছসহ ছোট শামুক জাতীয় শক্ত খোলের প্রাণী খেয়ে সাবাড় করে ফেলে।

এ মাছ দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছে মৎস্য অধিদপ্তর। তাদের এক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, সাকার ফিশ আশির দশকে ব্রাজিল থেকে অননুমোদিতভাবে বাহারি মাছ হিসেবে প্রথম বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।

অ্যাকুয়ারিয়ামের কাঁচে যে শ্যাওলা জমে, তা খেয়ে পরিষ্কার রাখে সাকার ফিশ। এ কারণে অ্যাকুয়ারিয়ামে এই মাছ রাখা হয়। ধারণা করা হয়, বিদেশ থেকে আনা এই মাছ কোনোভাবে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

সাকার ফিশ নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরে চাষ করা মাছের সঙ্গে ব্যাপকভাবে ধরা পড়ছে, যা জীববৈচিত্য তথা দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। ২০২৩ সালে সরকার সাকার ফিশের আমদানি, প্রজনন, চাষ, পরিবহন, বিক্রি, গ্রহণ বা প্রদান, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে।

মৎস্য অধিদপ্তরের এই প্রচারপত্রে বলা হয়, দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে এই মাছ। দেশীয় প্রজাতির মাছের ডিম ও রেণু খেয়ে বংশবিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, সর্বোপরি জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে এ মাছটি।

দেশীয় প্রজাতি ছোট মাছসহ জলজ পোকামাকড়, শেওলা, ছোট শামুকজাতীয় প্রাণী খেয়ে সাকার ফিশ পরিবেশের সহনশীল খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট করে। জলাশয় পাড়ের ক্ষেত্রবিশেষ পাঁচ ফুট পর্যন্ত গর্ত করে পাড়ের ক্ষতি করে এবং জলাশয়ের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা কমায়।

এ মাছ স্বল্পমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত পানিতে, এমনকি নোংরা দূষিত পানিতেও বেঁচে থাকতে ও দ্রুত বংশ বিস্তার করতে পারে। এ মাছের প্রজননকাল মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস, স্ত্রী মাছ ৫০০-৩০০০ টি ডিম পাড়ে।

মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, এ মাছটি যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে সাথে সাথে বিনষ্ট করতে হবে, যেমনঃ মাটিতে পুঁতে ফেলা যেতে পারে। পুকুর, দীঘি বা চাষকৃত জলাশয় সম্পূর্ণ শুকিয়ে বা সেঁচের মাধ্যমে এ মাছ সম্পূর্ণ বিনষ্ট করতে হবে। পুকুর বা উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রবেশ রোধের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।

এ্যাকুরিয়ামের মাছ হিসেবে বাজারজাতকরণের নিমিত্তে হ্যাচারিতে প্রজনন বা লালন পালন বন্ধ করতে হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করলে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

নেত্রকোনায় পুকুরে পুকুরে মিলছে সর্বগ্রাসী সাকার মাছ, আতংকে মাছ চাষিরা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ করা না হলে আগামী শনিবার (২৮ জুন) থেকে রাজস্ব বোর্ডের সব দপ্তর লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছে সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা এই ঘোষণা দেন।

আবদুর রহমানকে আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী আমলা আখ্যা দিয়ে মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, দেশ ও রাজস্ব ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে আবদুর রহমান খান। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এনবিআরের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।

তারা বলেন, ইতোমধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবির এই আন্দোলনকে বাধা দিতে গতকাল রোববার আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। এর মধ্যে দুজন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের, একজন এনবিআর বোর্ড অফিসের এবং বাকি দুজন ঢাকা ও কুমিল্লা কর অঞ্চলের। এ ধরনের বদলির তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে আন্দোলনের থামাতো এই ধরনের বদলি বন্ধেরও দাবি করেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনবিআরের প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ আজ সোমবারের মধ্যে বাতিল না করা হলে আগামীকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকাস্থ কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি এবং ঢাকার বাইরে নিজ নিজ দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি, কলমবিরতি এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে। এছাড়া প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক সব বদলি আদেশ বাতিল না করা হলে এবং এ ধরনের নতুন কোনো বদলি আদেশ জারি করা হলে আগামী ২৫ ও ২৬ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে কলমবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৭ জুনের মধ্যে এসব বদলি আদেশ বাতিল না হলে ২৮ জুন থেকে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে বলা হয়েছে।

এর আগে আজ সকালে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাফনের কাপড় পরে তিনঘণ্টা (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত) কলম বিরতিরসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। এসময় সংস্থাটির বিভক্ত করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ তৈরিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্ব রাখার জোরদাবি রাখেন। কর্মসূচিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছে, অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এনবিআর চেয়ারম্যানকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণাটি থাকবে।

গত মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে অধ্যাদেশ জারির পর তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচিতে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে সরকার পিছু হটে। বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পরে কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি বজায় রাখেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি স্বাভাবিক কাজে ফিরলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি নেওয়া হলেও তাদেরকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছেন রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রার রামজীবন কুন্ডু

নেত্রকোনায় পুকুরে পুকুরে মিলছে সর্বগ্রাসী সাকার মাছ, আতংকে মাছ চাষিরা

রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছেন রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রার রামজীবন কুণ্ডু। মাত্র ৬ বছর বয়সেই তিনি পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার (মুজিবনগর কর্মচারী) সনদ! ওই সনদে তিনি চাকরি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার জন্মসনদ অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন ৬ বছরের শিশু। প্রকৃতপক্ষে ‘মুজিবনগর কর্মচারীর’ জাল সনদ দিয়ে এখন পর্যন্ত সাবরেজিস্ট্রার পদে চাকরি করে যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, তার পথ ধরেই দেশে এখন ৩৯ জন সাবরেজিস্ট্রার বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কর্মরত আছেন। এই চাকরির সুবাদে রামজীবন কুণ্ডু কয়েক কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ করেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের সংসদ-সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ সেনের ভাগ্নি জামাতা বলে পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ের সূত্রে এবং রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। প্রতিটি দলিল সম্পাদনের জন্য তাকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ঘুস দিতে হতো। রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিদিন এক থেকে দুই শতাধিক দলিল রেজিস্ট্রি হয়। এতে দেখা যায় তিনি প্রতিদিন দলিল সম্পাদন বাবদ প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ঘুস নিতেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার সহকর্মীরা জানান, তিনি রংপুর নগরীর আরএমসি মার্কেটের সামনে ৮ তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকার ওপরে। রাজারহাটে নিজ গ্রামে জমি কিনেছেন, যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকার বেশি। ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। রংপুর ধাপ চেকপোস্ট সড়কে তার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। নামে-বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

প্রতিদিন সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ঘুসের টাকা বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য রনি নামে একজনকে তিনি তার অফিসে নিজের চেয়ারের পাশে কম্পিউটার দিয়ে বসিয়ে রাখতেন। রনি টাকার হিসাব রাখত। সে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারী নয়। বাসা পর্যন্ত ঘুসের টাকা পৌঁছে দিত রনি নিজেই। এজন্য তাকে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন সাবরেজিস্ট্রার। আর এই সুযোগে রনি নিজেই ধাপ সাগর পাড়ায় ৫ তলা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। তার একাধিক মাইক্রোবাস রয়েছে বলেও জানা গেছে।

জন্ম সদনে রামজীবন কুণ্ডুর জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১৯৬৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৬ বছরেরও কম। এরপরও তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ হিসাবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে চাকরি করছেন। তার এই জাল সনদের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ হিসাবে ২০০৯ সালে ১৯০ জনকে সাবরেজিস্ট্রার পদে আত্তীকরণ করা হয়েছিল উচ্চ আদালতের নির্দেশে। তাদের মধ্যে ১৯৬৮, ১৯৬৭, ১৯৬৬, ১৯৬৫ সালে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরাও ছিলেন। যাদের বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র ৩ থেকে ৬ বছর ছিল।

জালিয়াতির মাধ্যমে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া নিয়ে তখন নিবন্ধন দপ্তরসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। কারণ মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। ওই সরকারের কর্মচারী হতে হলে তাদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্মসাল হওয়া দরকার ১৯৫২ অথবা তার পূর্বে। কিন্তু নিয়োগ পাওয়াদের সবারই জন্ম তারিখ ছিল ১৯৫৩ সালের পরে। এর মধ্যে ১৩৮ জনের বয়সই ছিল ১০ বছরের নিচে। আর ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সালে জন্ম তারিখ আছে এমন সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ জন। মূলত ’৬৪ সালের পর যাদের জন্ম দেখানো হয়েছিল তাদের ৩৯ জনই এখন কর্মরত রয়েছেন এবং আগামী বছর তারা অবসরে যাবেন।

জানা যায়, ২০০৯ সালে মুজিবনগর কর্মচারীর কোটায় সাবরেজিস্ট্রারের চাকরি পাওয়ার আগে রামজীবন কুণ্ডু কুড়িগ্রামের রাজারহাটে একটি প্রাইভেট কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।)

হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টে ভুল তথ্যের অভিযোগ, দুদকের সতর্ক বার্তা

নেত্রকোনায় পুকুরে পুকুরে মিলছে সর্বগ্রাসী সাকার মাছ, আতংকে মাছ চাষিরা

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে ভুল ও যাচাইবিহীন তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের দাবি, ওই পোস্টে দুদকের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় দুদক।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি পোস্ট কমিশনের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন।

এ বিষয়ে সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে একটি প্রতারক চক্র দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। যার সাথে দুদকের কর্মকর্তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। দুদক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, ইতোপূর্বে দুদক প্রতারণা রোধে সবাইকে সতর্ক করে আসছে, যা বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরূপ প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদককে দোষারোপ করে যার ফলে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তির শেষ অংশ দুদক জানায়, প্রতারণামূলক ফোন কল, বার্তা বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে কারও কাছ থেকে টাকা চাওয়া হলে কিংবা কোনো প্রতারণা বা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেলে দুদকের টোল ফ্রি হটলাইন-১০৬ নম্বরে জানানোর অথবা নিকটস্থ দুদক কার্যালয় বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।