
সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘৩০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় আরব দেশ হিসেবে বাহরাইন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্থাপনের পথ সুগম করল।’ শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র, বাহরাইন ও ইসরাইল এ ঘোষণা দেয়। সংবাদসূত্র :বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
বাহরাইন যে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে, তা নিয়ে গত মাস থেকেই গুঞ্জন ছিল। ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিরোধ নিষ্পত্তিতে জানুয়ারিতে ট্রাম্প ‘মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা’ হাজির করেছিলেন। ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সমঝোতায়ও তিনি মধ্যস্থতা করেছেন।
মিসর ও জর্ডানের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত আর বাহরাইন- ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের এ চারটি দেশের স্বীকৃতি পেল ইসরাইল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, আরেকটি আরব দেশের সঙ্গে ‘শান্তিচুক্তিতে’ পৌঁছাতে পেরে তিনি উৎফুলস্ন। ট্রাম্প পরে টুইটারে তার সঙ্গে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা বিন সালমান আল-খলিফার একটি যৌথ বিবৃতির কপিও পোস্ট করেন।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী ঘটনা, যা অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা, সুরক্ষা ও সমৃদ্ধি বাড়াবে।’ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে বাহরাইনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এদিকে, বাহরাইন-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণাকে ফিলিস্তিনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন ইরান পার্লামেন্টের স্পিকারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ পরামর্শদাতা হোসেইন আমির-আবদুলস্নাহিন।
আগামী মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। একই অনুষ্ঠানে বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুললতিফ আল-জায়ানিও থাকবেন।
নেতানিয়াহু ও জায়ানি সেদিন দুই দেশের মধ্যে হওয়া ‘ঐতিহাসিক শান্তির ঘোষণা’ দেবেন বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম। আরব লিগের সদস্যদের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়া ১৯৯৯ সালে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলেও ১১ বছর পর চলতি বছর তা ছিন্ন করে।
অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর ইসরাইলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ বাহরাইনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তুরস্কও। এক বিবৃতিতে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চুক্তিটি আরব দেশে শান্তি রক্ষার বিপরীত হিসেবে কাজ করবে। এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের পক্ষের লড়াইকে নতুন ধাক্কা দেবে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের অবৈধ কর্মকান্ডকে চালিয়ে যেতে আরও উৎসাহিত করবে।
তারা বলছে, ‘ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাহরাইনের এ উদ্যোগে আমরা উদ্বিগ্ন ও এর তীব্র নিন্দা জানাই।’ আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনের বিষয়টি সমাধান করে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের আগে থেকেই জোর দিয়ে আসছে তুরস্ক। তারা মনে করছে, এ চুক্তিটি ইসরাইলকে ফিলিস্তিনের প্রতি অবৈধ অনুশীলন এবং তাদের ভূমি দখল স্থায়ী করার জন্য চলমান কর্মকান্ডকে অব্যাহত রাখতে আরও উৎসাহিত করবে।
ফের পিঠে ছুরি মেরেছেন ট্রাম্প :ফিলিস্তিন
এদিকে, ইসরাইলের সঙ্গে বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন। দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টিকে ফিলিস্তিনের পিঠে আবারও ছুরিকাঘাত হিসেবে অ্যাখা দিয়েছে ‘প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’ (পিএলও)।
শুক্রবার বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল-খলিফা এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই সর্বোচ্চ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ছয় অনুচ্ছেদের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
ট্রাম্প যখন এই চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখছেন, তখন একে বিশ্বাসঘাতকের ছুরিকাঘাত আখ্যা দিয়েছে ফিলিস্তিন। আরব রাষ্ট্রগুলোর মাধ্যমে ফিলিস্তিনের পিঠে ছুরি মেরেছেন ট্রাম্প বলেও উলেস্নখ করা হয়।
এছাড়া গাজার সশস্ত্র শাসকগোষ্ঠী হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিকের সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনি স্বার্থের চরম ক্ষতি করেছে এবং এটি দখলদারীকে সমর্থন করছে।