ডেস্ক রিপোর্ট, বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
আজ ২৩মে মঙ্গলবার, পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার হাদল গণহত্যা দিবস। ডেমরা বাউশগাড়ি গণহত্যার ৮দিন পর ১৯৭১ সালের এই দিনে হাদল গ্রামে বর্বর গণহত্যাটি সংঘটিত হয়। গ্রামটি ছিল হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত অত্র এলাকার শান্তি সম্প্রীতির মিলনকেন্দ্র। এদিন প্রায় ৩ শতেরও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশুকে প্রাণ দিতে হয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর অত্যাচারে পাবনা সদর, ঈশ্বরদী, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিন্দু সম্রদায়ের লোকেরা নিরাপদ আশ্রয়ভেবে নিভৃতপল্লীর এই গ্রামে আশ্রয় নেয়। কিন্তু কেউ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি পিসকমিটির ঘাতকেরা নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য গোপনে পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছে।
বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিভৃতপল্লীর এই গ্রামটি চেনা জানার কথা নয়। যতদূর জানা গেছে অত্র এলাকার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পিসকমিটির নেতাদের পরিকল্পনায় এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় পাকিস্তানি বর্বর পাক হানাদার বাহিনী দ্বারা বাংলাদেশের অন্যতম এই জঘন্য গণহত্যাটি সংঘটিত হয়।
তখন সময় রাত ১২টা-১টা। হানাদার বাহিনী পাবনা থেকে প্রথমে ভাঙ্গুড়াতে আসে। জানা যায় হাদলের হাসান মৌলবী এবং তৎকালীন ভাঙ্গুড়া পিসকমিটির সভাপতি বর্তমান এম, পি মকবুল সাহেবের বাবা মহসিন হাজী সাহেব হানাদার বাহিনীকে হাদল গ্রামে পৌঁছে দেয়াসহ অস্ত্র-শস্ত্র পরিবহনে সহযোগীতা করে। এজন্য তারা পাশের ঘুমন্ত লোকদের ডেকে তুলে হানাদারদের সহযোগিতা করতে বাধ্য করেছিল।
বর্বর হানাদার বাহিনী রাতের অন্ধকারে ভাঙ্গুড়া থেকে হাটগ্রাম দিয়ে হাদল গ্রামে এসে গ্রামটি চারিদিক থেকে ঘিরে রাখে যা ঘুমন্ত গ্রামবাসী ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। ভোর হবার সাথে সাথে চারিদিক থেকে ব্রাশ ফায়ার, নিমিষে কয়েকশ ঘুমন্ত নিরীহ নারী, পুরুষ ও শিশুর রক্তে শান্তি সম্প্রীতির নিভৃত পল্লীর গ্রামটিতে রক্তের বন্যা বয়ে যায়।
প্রাণ বাঁচাবার আশায় শতশত নারী, পুরুষ ও শিশুর গগনবিদারী আর্তনাদে ছোটাছুটি করতে থাকে। শুরু হয় ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ। হাদলের মরা চিকনাই নদীর অপরপ্রান্তেও একদল পাকহানাদার বাহিনী লুকিয়ে থাকে। নিরাপদ ভেবে প্রাণ বাঁচাবার আশায় সাঁতরিয়ে যে সমস্ত নারী ওপারে গেছে, তাদেরকে ধর্ষণ শেষে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকহানাদার বাহিনী।
জানা যায়, হাদল গ্রামের যে প্রান্তে বেলুচ সৈন্যরা ঘিরে রেখেছিলো সেই প্রান্ত দিয়ে কিছু মানুষকে পালিয়ে যেতে তারা সহযোগিতা করেছিল। বয়স্ক কিছু লোকের অনুমান প্রায় ৫শত থেকে ৬শত নারী, পুরুষ ও শিশু হত্যা করা হয়েছিল।
অনেকের ধারণা, প্রায় ৩ শতেরও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু হত্যা করা হয়েছিল। যার মধ্যে ২৫ জন শিশু ছিল বলে জানা যায়। কয়েক শত নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। শত শত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ শেষে সকাল ১০টা-১১টার দিকে পাক হানাদার বাহিনী ভেড়ামরা হয়ে ভাঙ্গুড়া দিয়ে পাবনা চলে যায়।
জানা যায়, হাসান মৌলবী, যিনি এখনও বেঁচে আছেন, তিনি নিজে হাতে অনেক নারী-পুরুষ হত্যা করেছিল। এই গণহত্যায় আরও যারা জড়িত ছিল বলে জানা গেছে তারা হলো- মৌলানা লইমুদ্দিন গ্রাম বালুঘাটা, রজব মোল্লা গ্রাম হাদল, মিনাজ প্রামানিক গ্রাম হাদল, ইন্তাজ খাঁ গ্রাম হাদলসহ আরও অনেকে। যারা সবাই মৃত।
২৩-০৫-২০১৭-০০-১০০-২৩-ম/জা/