অপূর্ব হাসান, বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
আমাদের দেশে প্রাণীজ আমিষের অভাব খুবই প্রকট। আমিষের এ অভাব মেটাতে টার্কি মুরগি পালনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান বিশেষ জরুরী। নির্দিস্ট পুঁজি বিনিয়োগ করে সাম্প্রতিক সময়ে টার্কি মুরগি পালন একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় কৃষি শিল্প হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সঠিক পরিকল্পনায় টার্কি মুরগি খামার স্থাপনের মাধ্যমে টার্কি মুরগি পালনকে লাভজনক করে তোলা যায়।
টার্কি মুরগি খামার দু’ধরনের হতে পারে। যেমন-পারিবারিক টার্কি মুরগি খামার ও বাণিজ্যিক টার্কি মুরগি খামার। পারিবারিক টার্কি মুরগি খামারে অল্পসংখ্যক টার্কি মুরগি পালন করে সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে বাণিজ্যিক টার্কি মুরগি খামার গড়ে তোলা যায়। উৎপাদনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে টার্কি মুরগির খামার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। মাংস উৎপাদনের জন্য টার্কি মুরগি পালন করলে একে বলা হয় ব্রয়লার খামার। আবার ডিম উৎপাদনের জন্য খামার করলে একে বলা হয় লেয়ার খামার। তবে যে খামারই স্থাপন করা হোক না কেন তা লাভজনক করতে চাইলে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা, বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা ও সঠিক পরিচালনা।
টার্কি পালন পদ্ধতি তিন প্রকার
১) ছাড়া পদ্ধতি
২) অর্ধছাড়া পদ্ধতি
৩) আবদ্ধ পদ্ধতি
১) ছাড়া পদ্ধতি:
এ পদ্ধতিতে টার্কির রাত্রি যাপনের একটি ঘরের প্রয়োজন হয়। সকালে টার্কির ঘর খুলে সামান্য কিছু খাবার দিতে হয় তারপর টার্কি চড়তে চলে যায়। সন্ধ্যায় টার্কি নিজেই ঘরে উঠে। অনেক সময় ঘরে আসার অভ্যাস তৈরি করার জণ্য সন্ধ্যায় সামান্য খাবার দেয়া হয়।
সুবিধাঃ
▪ তেমন যত্নের প্রয়োজন নেই, পরিবারের যে কোন সদস্য এ কাজ করতে পারে।
▪ টার্কি নিজেই খাবার কুড়িয়ে খায় তাই খাদ্য খরচ খুবই কম।
▪ এদের মাংস সুস্বাদু এবং বাজারে এ জাতীয় টার্কির চাহিাদা বেশী
▪ পর্যাপ্ত সবুজ খাদ্য এবং সূর্যকিরন পায় এতে টার্কির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
অসুবিধাঃ
▪ বেশী জায়গার প্রয়োজন হয়।
▪ যেখানে সেখানে মল ত্যাগ করে বাড়ি নোংড়া করে।
▪ অনেক সময় ডিম হারিয়ে যায়।
▪ বন্য প্রানী টার্কি ধরে নিয়ে যায়।
২) অর্ধছাড়া পদ্ধতি:
এ পদ্ধতিতে টার্কি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সারাদিন ছাড়া অবস্থায় থাকে। দিনের বেলা টার্কির ঘর সংলগ্ন তারজালী বা বাশের বেড়ার তৈরি রানে থাকে। ৬ মিটার লম্বা ৩ মিটার চওড়া এবং ২.৬ মিটার উচু ঘর সংলগ্ন ২ মিটার উঁচু তারের জাল বা বাশের বেড়া দিয়ে রান তৈরি করে ১০০ – ১৫০ টি টার্কি পালন করা যায়। খাদ্য ও পানির পাত্র ঘরের মধ্যে অথবা রানের মধ্যে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার সাথে সাথে টার্কি ঘরে আশ্রয় নেয়। সপ্তাহে ৩-৪ দিন রান ঝাড়– দেওয়া এবং জীবানুনাশক যেমন চুন বা ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া উত্তম।
সুবিধাঃ
▪ টার্কি দিনের বেলা রানের মধ্যে থাকে বিধায় প্রচুর আলো বাতাস পায় এতে স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
▪ খাদ্য ও পানি দিতে সুবিধা
▪ রানে আবদ্ধ থাকে ফলে অন্যের ফসল নষ্ট করতে পারেনা, বাড়তি জায়গা নোংড়া করতে পারেনা
▪ রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ টার্কির সংস্পর্শে আশতে পারেনা ফলে রোগ বালাই কম হয়
▪ টার্কি হারানোর সম্ভাবনা থাকেনা
অসুবিধাঃ
▪ ঘর ও রান তৈরির জন্য বেশী জয়গার প্রয়োজন
▪ রান তৈরিতে বাড়তি খরচ হয়
▪ পরিচর্যার খরচ তুলনামূলক বেশী
৩) আবদ্ধ পদ্ধতি: আবদ্ধ পদ্ধতি আবার তিন প্রকার-
ক) লিটার পদ্ধতি
খ) মাচা পদ্ধতি
গ) খাঁচা পদ্ধতি
৩ক) লিটার পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে ঘরের মেঝের উপর লিটার ব্যবহার করে টার্কি পালন করা হয়ে থাকে
সুবিধাঃ
▪ টার্কির জন্য আরামদায়ক
▪ নির্মান খরচ কম
▪ প্রজননের জন্য সুবিধা
▪ ব্রয়লারের জন্য সুবিধাজনক
অসুবিধাঃ
▪ বেশী পরিমানে ডিম ভাংগে
▪ জায়গা বেশী প্রয়োজন
▪ কুজে হওয়ার সম্ভাবনা বেশী
▪ অনেক সময় টার্কি ডিম খেয়ে ফেলে
৩খ) মাচা পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে মাটি থেকে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় বাঁশ, কাঠ, তার, লোহা ইত্যাদি দিয়ে মাচা তৈরি করে পালন করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ০.৫ ইঞ্চি দূরে দূরে বাঁশ বা কাঠ স্থাপন করতে হয়। পুলেটের ক্ষেত্রে ৪ সপ্তাহ এবং ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ২ সপ্তাহের পর মাচায় লিটার দিতে হয়না।
সুবিধাঃ
▪ রোগব্যাধি কম হয়
▪ অল্পস্থানে বেশী টার্কি পালন করা যায়
▪ কম পরিমানে লিটার লিটার প্রয়োজন হয়
▪ টার্কির বিষ্ঠা মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়
অসুবিধাঃ
▪ নির্মান খরচ বেশী
▪ ডিম ভাঙ্গার সম্ভাবনা থাকে
▪ প্রজননে অসুবিধা হয়
▪ বিষ্ঠা পরিস্কার করতে অসুবিধা হয়
৩গ) খাঁচা পদ্ধতি: খাঁচায় টার্কি পালন আজকাল বেশ জনপ্রিয়। বাসা বাড়িতে এবং বড় বড় বানিজ্যিক খমারে ডিম উৎপাদনের জন্য খাঁচায় টার্কি পালন করা হয়। এতে খাবার এবং পানির পাত্র খাচার সাথে সংলগ্ন থাকে। খাঁচার সামনের বর্ধিত ঢালু অংশে খাঁচায় পাড়া ডিম সাথে সাথে গড়িয়ে এসে জমা হয়। এছাড়া খাঁচার মেঝ তারজালির তৈরি হওয়ায় বিষ্ঠা সহজেই নিচে পড়ে যায়। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি টার্কি দাড়ানোর জন্য ০.৫-০.৮ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়।
সুবিধাঃ
▪ অল্পস্থানে অধিক টার্কি পালন করা যায়
▪ পরিচর্যা সহজ
▪ অসুস্থ বা অনুৎপাদনশীল টার্কি সহজে বাছাই/ছাটাই করা যায়
▪ শ্রমিক খরচ কম
▪ খাদ্য অপচয় কম
৩/৫/২০১৭/৭০/