ডেস্ক রিপোর্ট , বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
নির্বাচনী ভাবনায় এবার বড় বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, এবার বাজেট হবে চার লাখ কোটি টাকার ওপরে। বিশাল বাজেট অর্থায়নে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৪৮ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। এর আগে কখনই ব্যাংক থেকে এত বেশি ঋণ নিয়ে বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। ফলে বাজেট ঘাটতিও অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি হচ্ছে। আগামী বাজেটে সামগ্রিকভাবে ঘাটতি ১ লাখ ২৯ হাজার ১২৫ কোটি টাকা থাকতে পারে। শতকরা হারে যা জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বর্তমানে বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ।
সাধারণত বাজেটে আয়-ব্যয়ে পার্থক্য বা ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়। প্রচলিত ‘বাজেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৯’এ বিধান রাখা হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) চাচ্ছে বাংলাদেশে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশ মধ্যে থাকুক। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এর চেয়ে বেশি ঘাটতি হলে তা হবে অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক। ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়ে বাজেট বাস্তবায়নের চিন্তাকে নিরুৎসাহিত করেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, এই প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ভালো না। কেননা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। ফলে ব্যক্তি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য সেটি মনে করেন না। তারা বলছেন, এবার প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। বর্তমান সরকার ব্যাংক থেকে আগের চেয়ে তুলনামূলক কম ঋণ নিচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। ফলে বেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এ মুহূর্তে অর্থনীতির জন্য ঝুঁকির আশঙ্কা কম।
জানা যায়, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমলেও বেড়েছে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে সংশোধিত বরাদ্দ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি নেওয়া হয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ এটি সর্বোচ্চ। এতে করে সরকারের সুদ পরিশোধে চাপ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার কোটি টাকা এবং এর আগের অর্থবছরে ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে সম্পদ কমিটি আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। বিশাল ঘাটতি পূরণ করা হবে অভ্যন্তরীণ উৎস তথা ব্যাংক ঋণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও বিদেশি উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থের মাধ্যমে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে আসবে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা ও বিদেশি সহায়তা বাবদ আসবে ৫৭ হাজার কোটি টাকা।
ঋণ নিয়ে বড় বাজেট প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা কেন_ জানতে চাইলে আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও বেসরকারি গবেষনা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার প্রচুর বিনিয়োগ। এর জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে যে পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়ার প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। সে জন্যই ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে দুর্বলতার কারণেই বাজেট ‘ঘাটতি অর্থায়নে’ ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। তাই ঋণনির্ভরশীলতা কমাতে হলে রাজস্ব আদায় বাড়াতেই হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুদ বাবদ ব্যয় এখন বাজেটের সর্বোচ্চ একক খাত। এটি মোট বাজেটের ১৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এই ঋণের সুদ পরিশোধের কারণে চাপ বাড়ছে বাজেটে। সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ ঋণের পাশাপাশি বিদেশি সাহায্যের বিপরীতেও সুদ পরিশোধ করতে হয় সরকারকে। তবে বিদেশি ঋণের সুদ তুলনামূলক সস্তা। সে জন্য বিদেশি ঋণ গ্রহণে বেশি উৎসাহিত করেন অর্থনীতিবিদরা। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইআরডির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এখন বছরে যে পরিমাণ বিদেশি সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে তা জিডিপির মাত্র দেড় শতাংশ। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে এটি কমপক্ষে জিডিপির ৬ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান মনসুর বলেন, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদহার বিদেশি ঋণের চেয়ে কমপক্ষে ৩ গুণ। তাই সস্তায় যত বেশি বিদেশি ঋণ পাওয়া যাবে, দেশের উন্নয়নের জন্য তত বেশি মঙ্গল হবে।
২৯/৪/২০১৭/৫০/মা/হা/তা/