মনির জামান, বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
উন্নত জীবনের আশায় প্রতিদিনই ভিটে-বাড়ি ছেড়ে রাজধানীমুখী হচ্ছে মানুষ। কিন্তু অতিরিক্ত
মানুষের চাপে তিলোত্তমা এ নগরীতে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। সচ্ছল জীবনের আশায় রাজধানীতে আসা এসব মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ আর ভোগান্তির জীবনে প্রবেশ করছে। জীবনযাত্রার ব্যয়ের পাশাপাশি নেই পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাও পাওয়া যায় না। তাছাড়া নিরাপদ যাতায়াত, যানজট, জলাবদ্ধতাসহ অপরাপর সমস্যা তো রয়েছেই।ভুক্তভোগীরা বলছেন, যেখানে সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি আর অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ যেন বেড়েই চলছে। তবে এ দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্টদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বাড্ডা-লিংক রোড থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত সড়কের বেহাল চিত্র। তীব্র যানজটের পাশাপাশি সড়কের মাঝখানে বিশাল অংশ কেটে সেখানে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া সড়কের দুই পাশে ড্রেনের বড় বড় পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে। আর পথচারী চলাচলের ফুটপাতও রয়েছে হকারদের দখলে। ফলে ২০ ফুট চওড়া সড়কের মাত্র ১০ ফুটও গাড়ি চলাচলের জন্য ফাঁকা নেই। এ কারণে যানজটসহ নানা দুর্ভোগ যেন গত তিন মাস ধরে এ পথে চলাচলকারীদের পিছু ছাড়ছে না। একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন। প্রতিদিনই তিনি রাজধানীর মধ্য বাড্ডা থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কর্মস্থলে যান। ভোগান্তির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ১০ মিনিটের পথ যানজটের কারণে ঘণ্টাখানেকের মতো লেগে যায়। আর ফিরতি পথে তো দুর্ভোগের শেষে নেই। নতুন বাজারের পর ক্যামব্রিয়ান কলেজের সামনে দিয়ে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য মধ্যবাড্ডা যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। ফুটপাত না থাকার কারণে হেঁটেও যাওয়া যায় না। একই চিত্র রামপুরা, মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক-মালিবাগ মোড়, মগবাজার ও শান্তিনগর সড়কেও। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব সড়কে হাঁটু পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পথচারী ও গাড়ি চালকরা বলছেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে দুই বছর ধরে এসব সড়ক বেহাল, যা বর্ষাকালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ফলে এ সড়কে চলাচল করা খুবই কষ্টকর। তাই অধিকাংশ যানবাহনই এ সড়কটি এড়িয়ে ফকিরাপুল-রাজারবাগ-খিলগাঁও ফ্লাইওভার দিয়ে মালিবাগ রেলগেট হয়ে যাতায়াত করছে। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে সদরঘাটে চলাচলকারী সুপ্রভাত পরিবহণের এক চালক বলেন, এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে পানি নামে না দুই-তিন দিনেও। বর্ষা তো এখনও পড়েই আছে। গত দুদিনের বৃষ্টিতেই যেন দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে পাকা সড়কের পিচ ও ঢালাই উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। বেশ সতর্কতা নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। প্রায়ই নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি। এ তো গেল যাতায়াতের দুর্ভোগ, রয়েছে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সমস্যাও। গত কয়েকদিন রাজধানীর উত্তরখান, গে-ারিয়া, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কালশী, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডসহ একাধিক এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাস ও পানির তীব্র সঙ্কট দেখা গেছে। গত ১৬ এপ্রিল গে-ারিয়ায় জনপ্রতিনিধি’ অনুষ্ঠানে মেয়র সাঈদ খোকনের সামনেই কলসী ও বালতি নিয়ে পানির দাবিতে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। জলাবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, মালিবাগ, শান্তিবাগ, আরামবাগ ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জরিপ করে এ বছর জলাবদ্ধতা নিরসনে উন্নত ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি বছর এসব স্থানের জলাবদ্ধতা ৬০ ভাগের বেশি কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ সিটির পাশাপাশি ওয়াসাও নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ২০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে। তবে নগরীতে সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসার উন্নয়ন কাজে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করেছেন নগরবাসী। তারা বলেন, নিজেদের মধ্যে সমন্বয় ও গবেষণাভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ‘জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন’ কিনেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু তাতেও কোনো সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না। মেশিনটি কেনার সময় বলা হয়েছিল, এ মেশিন দিয়ে মাত্র ১০ মিনিটেই ১২০ মিটার দৈঘ্র্যের ড্রেনের ময়লা নিমিষেই পরিষ্কার করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে এই মেশিনের উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি। এরপরও এসব বিষয়ে আশার কথা শোনালেন ঢাকার দুই মেয়র। তারা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমেই জলাবদ্ধতার হার ৬০ শতাংশ কমে আসবে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগামী বছর শতভাগ জলাবদ্ধতামুক্ত হবে রাজধানী।