ডেস্ক রিপোর্ট , বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনির হাওড়ে ও লাগলো শনির দশা। অতিবৃষ্টি আর উজানের ঢলের পানি ঠেকানোর সব চেষ্টাই ব্যর্থ হলো কৃষকের। সপ্তাহ তিনেক ধরে যে শঙ্কা ঘিরে ছিলো, সেটিই বাস্তব হলো। বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেলো, স্বপ্নের ফসল। যাতে মাঠ ভরা সবুজের সমারোহ বিলীন, অথৈ পানিতে। রইলো শুধু কৃষকের চোখের জল আর বুকভরা হাহাকার। যদিও, পানিসম্পদমন্ত্রীর দাবি, কৃষকরাই নিজেদের প্রয়োজনে কেটেছেন বাঁধের বিভিন্ন অংশ। গতকাল রোববার সকালে সাংবাদিক সম্মেলনে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলছেন, কৃষকরাই নিজেদের প্রয়োজনে কেটেছেন বাঁধের বিভিন্ন অংশ। এ সময় বাঁধ নির্মাণে বিভিন্ন সময়ের দুর্নীতির কথাও স্বীকার করেন তিনি।
গতকাল রোববার সকাল থেকে সিলেট অঞ্চলে মূষলধারে বৃষ্টি হয়। সেই সাথে বেড়েছে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে প্রবাহিত নদীর পানি। ফলে মধ্যরাত হতে যাদুকাটাসহ সীমান্তের অন্যান্য ছোট নদী দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি ঢলে শনির হাওড়ের বাঁধ ভেঙে যায়।
বানের পানিতে তলিয়েছে, হাওড়ের প্রায় ৪ লাখ হেক্টর জমির ফসল। এরমধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ লাখ হেক্টর বোরো ধানের খেত। পানি দূষণে মারা পড়েছে, ১ হাজার ২শ’ টন মাছ। সব মিলিয়ে চরম বিপাকে ৫০ হাজার কৃষক ও ৭৬ হাজার জেলে। এসব তথ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের। এ দিকে সামগ্রিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়া সাড়ে ৩ লাখ মানুষকে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন ত্রাণমন্ত্রী।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া গতকাল রোববার তার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে দেশের ৬টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট এবং নেত্রকোণা জেলার কৃষকরা। এই ৪ জেলার কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন, যারা বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল। আর সেই ধানের ৮৬ শতাংশ নষ্ট হয়েছে।
এ দিকে ফসল ডোবার পাশাপাশি হাওড়ের পানিও দূষিত হচ্ছে দিন দিন। এতে মরে যাচ্ছে মাছ, ব্যাঙ ও হাঁসসহ নানাবিধ জলজ প্রাণী। এমন অবস্থায় সরকার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওড় এলাকার ৬টি জেলার বন্যাদুর্গত জনগণের জন্য ১শ’ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
গতকাল রোববার এক আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম সাংবাদিকদের বলেন, সরকার বন্যা দুর্গত ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারের মধ্যে প্রত্যেকটি পরিবারকে প্রতিমাসে ৩০ কিলোগ্রাম চাল ও নগদ ৫ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বন্যা দুর্গত জনগণের মধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন চাল বিতরণ করা হবে এবং এই কর্মসূচির জন্য মোট ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে পানি সম্পদ, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, অর্থ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদী হাসান সুনামগঞ্জের হাওড় পরিদর্শনকালে আগামী এক সপ্তাহ হাওড়ের মরা মাছ না খেতে স্থানীয়দের পরামর্শ দিয়েছেন।
মৎস্য অধিদফতর বলছে, হাওড়ে বছরে মাছের উৎপাদন ৪০ হাজার টন। অথচ বাঁধ তৈরিতে আমলে নেয়া হয়নি মাছের অনুকুল পরিবেশ। তাই তাৎক্ষণিকভাবে এই ক্ষতি। ফলে বিপদে পড়েছেন ৪৬ হাজার মৎস্যজীবী।
আর কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের ধারণা, এই বানে উৎপাদন কমতে পারে ৬ লাখ মেট্রিকটন চাল। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ৬ জেলার কৃষকদের জন্য নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।
এ দিকে, হাওড়ের পানি দূষিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল সুনামগঞ্জের কয়েকটি হাওড় পরিদর্শন করেছে। তারা হাওড়গুলোর পানির নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা অধিদফতর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি গবেষক দল পরীক্ষা করে হাওড়ের মাছ মৃত্যুর চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। কারণগুলো হলো-পানিতে অঙ্েিজন কমে যাওয়া, অ্যামোনিয়া গ্যাস বেড়ে যাওয়ায়, অ্যাসিডিটির প্রভাব ও কীটনাশক। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে তারা হাওড়ের পানিতে কোনো ধরনের ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রীয় পদার্থের নমুনা পাননি। বরং দেশভিত্তিক ইউরেনিয়ামের সাধারণ যে সূচক, হাওড়ে তার চেয়ে কম রয়েছে।
২৪/৪/২০১৭/১১০/মনির জামান