ডেস্ক রিপোর্ট , বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
রংপুরের মিঠাপুকুরে স্ত্রীর দাবিতে ১৬ দিন ধরে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করছেন এক যুবতী। চলতি মাসের ৬ তারিখে তিনি মিলনপুর ইউনিয়নের জানকিপুর গ্রামের প্রেমিক সানোয়ার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। ওই যুবতীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করেছে প্রেমিকের স্বজনেরা। এরপরও শুধুমাত্র বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি। স্ত্রীর মর্যাদা না পেলে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন ওই যুবতী।
প্রেমিকা আলেমা বেগম উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। প্রেমিক সানোয়ার হোসেন মিলনপুর ইউনিয়নের জানকিপুর গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে।
এলাকাবাসী ও পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ঘটকের মাধ্যমে ওই যুবতীর বিয়ে ঠিক হয় সানোয়ার হোসেনের সাথে। মাস খানেকের মধ্যে ধুমধাম করে বিয়ে উঠিয়ে নেবে বরপক্ষ-এমনই প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের। এরই মধ্যে সানোয়ার হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে প্রেম জমে ওঠে তার। সর্ম্পক গভীর হয়। এরই মধ্যে সানোয়ার হোসেন হবু স্ত্রীর সাথে শারিরিক সর্ম্পকও গড়ে তোলেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল এলাকায় প্রেমিক যুগলকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে সানোয়ারের লোকজন তাদের মিলনপুর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন। বিষয়টি নিয়ে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোন সুরাহা হয়নি। প্রভাবশালীরা কৌশলে ওই যুবতীকে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু, কিছুতেই ঘটনাটি মেনে নিতে পারেননি তিনি।
গত ৬ এপ্রিল সকালে ওই যুবতী বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে যাওয়ার পর লোকজন মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন উপেক্ষা করে ১৬ দিন ধরে ওই বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।
ওই যুবতী সাংবাদিকদের বলেন, ভাগ্যই আমাকে বঞ্চিত করছে। জীবনটি এমন হবে, কখনই ভাবতে পারিনি। এখানে আসার পর থেকে লোকজনেরা কয়েকদফা মারপিট ও বাড়ি হতে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেছে। তিনি আরো বলেন, যতদিন পর্যন্ত স্ত্রীর মর্যাদা পাবনা, ততদিন আমি এখানে অবস্থান করব। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার হুমকি দেন।
আনোয়ার হোসেন ও মমেনা বেগমসহ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, মেয়েটির সঙ্গে সানোয়ারের বিয়ের কথা ছিল। পরে সানোয়ারের পরিবার মেয়েটিকে মেনে নিতে অস্বীকার করে। শুনেছি, সানোয়ার মেয়েটিকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করেছে। মেয়েটি কয়েকবার তার (সনোয়ার) বাড়িতে দাওয়াত খেতেও এসেছিল। তারা আরো জানান, বিয়ে মেনে নেয়ার জন্য সানোয়ারের পরিবারকে চাপ প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে, সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়েছে তাদেরকে।
প্রেমিক সানোয়ার হোসেনের মা সানোয়ারা বেগম বলেন, মেয়েটির সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে ঠিকঠাক হয়েছিল। কিন্তু, আমরা পরে, ওখানে বিয়ে দেইনি। তবে, সানোয়ার-আমেনা’র প্রেমের সর্ম্পকের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি তিনি।
ওই মেয়েটির ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার বোনকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন প্রেম করে তা অস্বীকার করছেন সানোয়ার। সে আমার বোনকে ধোকা দিয়েছে।
মিলনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, বিয়ে প্রলোভনে ঘটনায় এর আগেও একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন মেয়েটি। কিন্তু, ছেলের পরিবার প্রতিবারই বিষয়টি এড়িয়ে কাটিয়ে গেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের লিখিত পরামর্শ দিয়েছি। বালুয়া মাসিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, মেয়েটির স্ত্রী দাবি চাওয়া যৌক্তিক। কারণ, ছেলেটি তাঁকে স্ত্রীর মতই ব্যবহার ও দির্ঘদিন প্রেম করেছে।
মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এ ধরনের ঘটনার খবর শুনেছি। তবে, কোন লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন-অর রশীদ বলেন, ঘটনাটি খুবই হূদয় বিদারক। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২৩/৪/২০১৭/৫০/আ/হা/