ডেস্ক রিপোর্ট ,বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
চিত্রনায়ক শাকিব খানের কাছ থেকে স্ত্রীর অধিকার ও নিজের একমাত্র সন্তানের স্বীকৃতি পেতে সোমবার আকস্মিকভাবেই স্যাটেলাইট চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টি ফোর-এ সরাসরি সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন অপু বিশ্বাস। সঙ্গে ছিলো তার ছেলে আব্রাহাম খান জয়। এতে দীর্ঘদিনের অনেক না বলা কথা তুলে ধরেছেন জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকা।
বিকেল ৪টায় প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে অপু বিশ্বাস দাবি করেছেন, তিনি চিত্রনায়ক শাকিব খানের স্ত্রী, তাদের একটি ছেলেও আছে। নায়িকা আরও জানান, ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল শাকিব খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। নায়কের গুলশানের বাড়িতে উভয় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে বিয়ের আয়োজন সারেন তারা। বিয়ের সময় শাকিবের বাড়িতে তার ভাই ও বাড়ির লোকজন, অপুর মেজো বোন এবং প্রযোজক মামুনুজ্জামান মামুন উপস্থিত ছিলেন। বিয়ে পড়াতে শাকিবের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ থেকে কাজী এসেছিলেন। ইসলাম ধর্মমতে তাদের বিয়ে হয়। অপু বিশ্বাসের নতুন নাম রাখা হয় অপু ইসলাম খান।
নায়িকা আরও জানান, তাদের এক পুত্রসন্তানও রয়েছে। নাম আব্রাহাম খান জয়। অপু বিশ্বাস বলেন, এতদিন শাকিব খানের চাপেই বিয়ের খবর গোপন রেখেছিলাম। কিন্তু এরপরও সম্মান চেয়ে পাইনি। বারবার ছোট হয়েছি।’
প্রায় ১০ মাস লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার পর প্রথমবারের মতো কোনো গণমাধ্যম হিসেবে চ্যানেলটির লাইভে কথা বলেন এ চিত্রনায়িকা। এ সময় লোকক্ষুর অন্তরালে থাকা ও সন্তান জন্মদান প্রসঙ্গে অশ্রুসিক্ত অপু বিশ্বাস বলেন, আমি ১০ মাস অনেক কষ্ট করেছি…অনেক সহ্য করেছি। আর কতো সহ্য করবো? আমিও তো মানুষ। আমার ভেতরে ভালো মন্দ আছে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতার একটি ক্লিনিকে আমাদের সন্তান আব্রাহামের জন্ম হয়। কিন্তু সেসময় শাকিব আমার পাশে ছিলেন না। পিতা হিসেবে শাকিব খান দায়িত্বও নেননি। কেবল টাকা পয়সা দিয়েই তিনি দায়িত্ব শেষ করেছেন।
নিজের মর্যাদা প্রসঙ্গে ‘কোটি টাকার কাবিন‘ খ্যাত এই অভিনেত্রী বলেন, শাকিব আমাকে ছোট করে দিয়েছে। আমি সব সময় চেয়েছি ওর ভালো হোক। এ কারণে বিয়ে ও সন্তানের খবর গোপন করেছি। কিন্তু ও আমার মর্যাদা রাখেনি। ওর উপেক্ষা ছিলো অনেক যন্ত্রণার। শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করতে না পেরে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছি। আমি স্ত্রী হিসেবে ওর সন্তানের মর্যাদা চাই। আমি চাইছি ও আমার পাশে থাক…।
আব্রাহামকে শাকিব খানের ঔরসজাত সন্তান দাবি করে অপু বিশ্বাস বলেন, তার সন্তানকে যেন বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত না করা হয়। শাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতির জন্য নবাগতা চিত্রনায়িকা বুবলীকে দায়ী করে অপু বিশ্বাস বলেন, মাঝে একদিন শাকিবের সঙ্গে তোলা একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বুবলী এর ক্যাপশনে লিখেছেন, ফ্যামিলি টাইম। এটা দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। এরপর আমি বুবলীকে ফোন করলে সে আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করেনি। আমিও রাগের মাথায় কিছু গরম কথা শুনিয়েছি তাকে।
বুবলীকে কখনোই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করেন না উল্লেখ করে অপু বলেন, আমি দীর্ঘ সময় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার কারণে শাকিব তার নতুন নায়িকা হিসেবে টিভি সংবাদ উপস্থাপিকা বুবলীকে বেছে নেন। আসলে আমার ছেড়ে যাওয়া সিনেমাতেই মূলত কাজ করার সুযোগ পায় বুবলী। বুবলীকে শুভকামনা জানিয়ে নায়িকা বলেন, বুবলী কাজ করছে, করুক। কিন্তু তার বুঝতে পারা উচিত, শাকিবের স্ট্যাটাসটা কী, শাকিব আর আমার সম্পর্কটা কী…।
অপু বিশ্বাস ফের শুটিং শুরু করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমার সব মনে আছে আমি কী কী সিনেমা অসমাপ্ত রেখেছিলাম। এক দেড় মাসের মধ্যে আমি কাজ শুরু করবো।
এদিকে বিবার্তার সঙ্গে আলাপকালে শাকিব খান বলেন, ‘আমি আমার সন্তানের দায়িত্ব নেবো। তবে কেন অপু বিশ্বাসের দায়িত্ব নেবো না তা সময় হলেই জানাবো। সেটা খুব দ্রুত হতে পারে। আবার দেরিও হতে পারে। দেখা যাক কী হয়।
চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস যখন টিভি লাইভ শোতে শাকিবকে নিয়ে নিজের নানা বঞ্চনার কথা বিয়ের কথা গোপন রাখার কারণ উল্লেখ করে শাকিব বলেন, আমি বরাবরই আমার ব্যক্তিগত জীবন আর ক্যারিয়ার আলাদা করে রাখতে চেয়েছি। ব্যক্তি জীবনটা সামনে আনতে চাইনি। এখন সে (অপু বিশ্বাস) এনেছে। আমি অপুর সব চাহিদা পূরণ করেছি। যখন বলেছে টাকা দিয়েছি। আব্রাহামের দায়িত্ব আমি নিবো। সে আমার সন্তান। সারা জীবন তার দায়িত্ব আমি নিয়ে যাব। আমি তো মাঝে মাঝে ছেলেকে দেখতে যেতাম। নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম। এরপরও কেনো অপু এটা করলো বুঝলাম না। শাকিব-অপুর বিয়ে ও সন্তানের কথা ফাঁস হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নায়ক-নায়িকাকে নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। এতে অনেকেই অপু বিশ্বাসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ছেলের দায়িত্ব নেবেন কিন্তু অপুর দায়িত্ব নেবেন না শাকিবের এমন বক্তব্যের নিন্দাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
খ্যাতনামা অভিনেতা ও চিত্রপরিচালক আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে অপু বিশ্বাসের। পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান বলেন, আসলে এটা তাদের একান্তই নিজেদের ব্যাপার। যদি অপু শাকিবের ভালোর কথা চিন্তা করে এতদিন বিষয়টি প্রকাশ্যে না এনে থাকেন, এখন কেনো আনলেন বুঝলাম না। অপুই তো বলেছেন শাকিব ছেলেকে দেখতে যেতেন, টাকা পয়সা দিতেন। তো এখন কী হলো যে এভাবে তা প্রকাশ করতে হলো।
এতে করে শাকিব-অপুর ক্যারিয়ার বা দেশিয় চলচ্চিত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি-না জানতে চাইলে পরিচালক আরও বলেন, এটা তো চলচ্চিত্রে হয়েই থাকে। ওরা তো ক্যারিয়ারের শীর্ষে থেকে বিয়ে করেছে। কেউ কেউ তো বিয়ে করে এসে নায়িকা হয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যদি বলিউডের কথা বলি, অমিতাভ বচ্চনের উন্নতির কথা চিন্তা করে তো জয়া ভাদুড়ী আর অভিনয়ই করলেন না। অপুও তেমনটি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন। শাকিব রাগের মাথায় হয়তো এ কথা বলেছে। মেজাজ ঠান্ডা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে আশা করছি।
১১/৪/২০১৭/৩৬০/ম/জা/