ডেস্ক রিপোর্ট ,বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
মহাকাশ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ
নেই। সৃষ্টির শুরু থেকেই মহাকাশ নিয়ে গবেষণা চলছে। মানুষের সীমাবদ্ধ ক্ষমতা দিয়ে এই অসীম মহাকশের রহস্য উদঘাটনে ব্যবহার করছে নানা যন্ত্রপাতি ও মহাকাশ যান। আর আমাদের মত আম-জনতার সেই যান সম্পর্কে জানতে আগ্রহের কমতি নেই। আশা করি আজকের এই টিউন আপনাদের মনকে কিছুটা হলেও তৃপ্ত করবে।
গত ৯ জুলাই শেষবারের মতো মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করে নাসার স্পেস শাটল আটলান্টিস। গন্তব্য ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। ১২ দিনের সফল যাত্রা শেষে ২০ জুলাই আবার পৃথিবীতে প্রবেশ করে আটলান্টিস। ওটা ছিল তার শেষ অভিযান। আটলান্টিসের শেষ যাত্রায় সাক্ষী হয়ে থাকতে ওয়াশিংটনের কেনেডি স্পেস সেন্টারে সেদিন জড়ো হয়েছিল সাড়ে সাত লাখ দর্শনার্থী।
জন্মকথা
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৭৯ সালে ‘আটলান্টিস’ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৮০ সালে একে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৯৮৪ সালে। ১৯৮৫ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম মহাকাশে যাত্রা করে। চার দিনে ঘুরে আসে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৬৪১ মাইল। এবারকারটা নিয়ে মোট ৩৩ বার মহাকাশে গেছে স্পেস শাটল আটলান্টিস। সমগ্র স্পেস শাটলের ইতিহাসে এটা ছিল ১৩৫তম যাত্রা। মহাকাশে মোট কাটিয়েছে ৩০৫ দিন। ওজন এক লাখ ৭৬ হাজার ৪১৩ পাউন্ড। দৈর্ঘ্য ৩৭.২ মিটার, উচ্চতা ১৭.২ মিটার। মোট ছয়টি স্পেস শাটল তৈরি করেছিল নাসা। প্রথমটির নাম ছিল ‘এন্টারপ্রাইজ’, যা কোনো দিনই ওড়েনি। ‘চ্যালেঞ্জার’ নামের আরেকটি স্পেস শাটল ১৯৮৬ সালে ওড়ার পরই বিস্ফোরিত হয়। ২০০৩ সালে অবতরণের সময় সমুদ্রে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ‘কলম্বিয়া’। ‘ডিসকভারি’ আর ‘এন্ডেভার’কে যাত্রা থেকে অব্যাহতি দিয়ে জাদুঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ছিল শুধু এই আটলান্টিস। এখন সেটারও স্থান হবে জাদুঘরে।
কাজবাজ
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আটলান্টিস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কর্মীদের পৌছে দিয়েছে। আবার সময়মতো নিয়েও এসেছে। এ ছাড়া কর্মীদের সারা বছরের রসদ সরবরাহ করেছে। একে দিয়ে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি পরিবহনের কাজও করিয়েছে নাসা।
অন্তিম যাত্রার ইতিবৃত্ত
চারজন কর্মী নিয়েছিল ১২ দিনের জন্য এই যাত্রা। কমান্ডার ছিলেন ক্রিস ফার্গুসন, পাইলট ছিলেন ডগ হার্লি এবং আর দুজন হলেন স্যান্ডি ম্যাগনাস ও রেঙ্ ওয়ালহেইম। মোট আট হাজার পাউন্ডের রসদ নিয়ে গেছে এবার, যেন ২০১২ সালের শেষ পর্যন্ত কর্মীরা মহাকাশ স্টেশনে কাজ চালাতে পারে। এ ছাড়া একটি পরীক্ষামূলক কৃত্রিম উপগ্রহের রিফুয়েলিং রোবট পৌছে দিয়েছে আটলান্টিস। ফিরিয়ে এনেছে ত্রুটিযুক্ত একটি শীতলীকরণ পাম্প।
অবসরে পাঠানো হলো যে কারণে
আসলে খরচ খুব। যন্ত্রপাতিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ঠিক নির্ভর করা যাচ্ছিল না। কলম্বিয়া বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকেই স্পেস শাটল নিয়ে কথা হচ্ছিল। আর মহাকাশবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই প্রযুক্তি দিয়ে বেশি কাজ করা সম্ভব নয়। তাই নতুন কোনো প্রযুক্তিতে মনোযোগী হওয়া ভালো।
আপাতত চলবে যেভাবে
রাশিয়ার স্পেস শাটল ‘সয়ুজ’ জরুরি কাজ চালিয়ে নেবে। এটা তিনজন যাত্রী বহন করতে পারে। বেশি প্রয়োজনে নাসা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্পেস-এঙ্, বোয়িং কিংবা সিয়েরা নেভাডার মহাকাশযানের সহায়তা নিতে পারে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই মহাকাশ যাত্রার উপযোগী নতুন ক্যাপসুল তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নাসা বলছে, স্পেস শাটল বন্ধ করায় তাদের যে সাশ্রয় হবে, তা নতুন কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবনে খরচ করতে পারবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পৃথিবীর নিকট কোনো গ্রহাণুতে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে নাসা। ২০৩০ সালের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে এবং এর উপগ্রহে।
আগামী দিনের ভাবনা
লিকুইড হাইড্রোজেনের মতো জ্বালানি ব্যবহার করা হতো শাটলে। এগুলো যথেষ্টই বিপজ্জনক ছিল। নতুন দিনের জন্য নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির কথা ভাবছে নাসা। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে রোবট ব্যবহারের মাধ্যমে খরচ কমানোর পরিকল্পনাও আছে।
২০ জুলাইয়ের মাহাত্ম্য
এদিন ফিরে এসেছে আটলান্টিস। এই দিনই চাঁদে পা রেখেছিল মানুষ। তাই অ্যাপোলো-১১ অভিযানের ৪২তম বার্ষিকী উদ্যাপিত হলো দিনটিতে। আবার মহাকাশ অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েরও সমাপ্তি ঘটল।
১১/৪/২০১৭/২৯০/শা/ফা/