ডেস্ক রিপোর্ট ,বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
কিছুদিন আগে ভারতের উত্তর প্রদেশের কাটারনিঘাট অভয়ারণ্যে সন্ধান পাওয়া যায় এক কন্যাশিশুর। বয়স বড়জোর ১১ বছর। ঘন জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে তার চিকিৎসার জন্য রাখা হয় বাহরাইচ জেলা হাসপাতালে। সেখানে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর এবার তার নাম দেওয়া হয়েছে এহসাস। এছাড়া তার থাকার জন্য ভারতের লখনৌয়ের একটি শেল্টার হোম ঠিক করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এর আগে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করার পর শিশুটির বেশ কয়েকটি নাম দেওয়া হয়েছিল। অনেকেই তাকে মোগলি, দুর্গা, পূজা কিংবা জঙ্গল গার্ল নামে ডাকছিলেন। তবে এবার তার নাম এহসাস দেওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, তার বাবা-মায়ের ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। এ কারণে তার এমন নাম দেওয়া হয়েছে যা সব ধর্মের মানুষেরই দেওয়া হয়।
শনিবার শিশুটিকে দেখতে রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী রিতা বাহুগুনা জোসি হাসপাতালে যান।
জঙ্গলকন্যার সন্ধান মিলল যেভাবে
শিশুটির সন্ধান পাওয়ার গল্প অনেকের মাঝেই আগ্রহের সৃষ্টি করে। গত জানুয়ারি মাসে মোতিপুর অভয়ারণ্যে প্রথম এই আশ্চর্য শিশুটির গতিবিধি টের পায় গ্রামবাসীরা। উদ্ধারের সময় শিশুটি ছিল নগ্ন, মাথার চুল ছিল জট পাকানো, হিংস্র জন্তুর মতো লম্বা লম্বা হাত-পায়ের নখ, বানর দলের সাথেই খেলা করছিল এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের মতোই বন্য জন্তুদের সঙ্গেই স্বচ্ছন্দে ছিল সে। আশ্চর্য শিশুটির খোঁজ পেয়েই খবর যায় স্থানীয় থানায়।
এ সময় স্থানীয়রা জানান, তার দুই হাত, দুই পা সব থাকলেও সে হাঁটার সময় দুই পায়ের সঙ্গে হাত দুটিকেও পায়ের মতো ব্যবহার করতে পছন্দ করে। কথা না বলে জন্তুদের কর্কশ শব্দ ব্যবহার করে বানরের মতো মনের ভাব প্রকাশ করে সে।
তার এ আচরণ অনেকেই বিশ্বের জনপ্রিয় ক্লাসিক দ্য জঙ্গল বুকের কিশোরী চরিত্র ‘মোগলি’র মতো বলে জানায়।
জানা যায়, তাকে উদ্ধারের সময় বাঁদরের দল তাদের দিকে তেড়ে আসে। ছোট শিশুটিও মানুষ দেখতেই ভয়ে গুটিয়ে যায়। অনেক কষ্টে জঙ্গল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে লোকালয়ে।
পুলিশ সুপার দীনেশ ত্রিপাঠি জানান, মেয়েটির সারা গায়ে আঁচড়ের দাগ। আমাদের প্রথম কাজ হল তাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা এবং তার বাবা-মায়ের সন্ধান করা।
এখন অনেকটাই সুস্থ
উদ্ধারের পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের সুপার ডি.কে.সিং জানান, মেয়েটি কোনো কথাও বলতে পারছে না এবং আমাদের ভাষাও বুঝতে পারছে না। গত কিছুদিন ধরে সে জন্তুদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে এবং তাই তাদের মতোই আচরণ করছে। যদিও এখন সে অনেকটাই ভাল আছে এবং আস্তে আস্তে যে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, নার্স, ও অন্যান্য মেডিকেল স্টাফদের চিনতে পারছে। নতুন এই পরিবেশ মানিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করছে। যদিও হাসপাতালে হাঁটার সময় চারটি হাত-পা কেই সে ব্যবহার করছে। এসব দেখে অনেকেই মনে করেন, একেবারের জন্মের পর থেকেই ওই বাচ্চাটিকে জঙ্গল এলাকায় বড় হয়েছে।
শিশুটির বাবা-মায়ের খোঁজে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।
বাঁদরের সঙ্গে বেড়ে ওঠেনি- মানসিকভাবে অসুস্থ
অনেকে বলছেন, জঙ্গলে বাঁদরের সঙ্গেই বড় হয়ে উঠেছে জঙ্গলকন্যা। এ কারণে অনেকেই তার নাম মোগলি দিয়েছেন। যদিও এই তত্ত্ব মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। জঙ্গলে বাঁদরের হাতে কোনো মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তারা একরকম উড়িয়েই দিচ্ছেন।
তাঁর আচরণ বাঁদরের মতো, চার হাত-পা মিলিয়ে হাঁটছে, হাতের ব্যবহার না করে মুখে করে খাবার তুলছে, বাঁদরের মতোই গায়ে আঁচড় কাটছে, আবার বাঁদরের মতোই মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করছে। এসব কারণে অনেকেই তাকে বাঁদরের সঙ্গে বসবাসকারী বলে মনে করছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবটা অন্য কিছু।
বন কর্মকর্তারা বলছেন, সেই জঙ্গলে নজরদারির জন্য কয়েকশ ক্যামেরা লাগানো আছে। বনকর্মীরা টহল দেন জঙ্গলে। এ কারণে বছরের পর বছর মেয়েটি জঙ্গলে দিন কাটিয়েছে আর তা বনকর্মীর চোখে এমনকী সিসিটিভির ক্যামেরাতে ধরা পরেনি। এটি একেবারেই অসম্ভব। তবে নজর এড়িয়ে কয়েকদিন জঙ্গলে থাকা সম্ভব।
শিশু চিকিৎসকদের কথায়, হয়তো মেয়েটির মানসিক অসুস্থতার কারণেই ওর মা-বাবা ওকে জঙ্গলে ছেড়ে গিয়েছিল। আর তাও বনকর্মীরা ওকে উদ্ধার করার কিছুদিন আগেই। বানরের কাছে মেয়েটি মানুষ হয়েছে এই তত্ত্বের কোনও ভিত্তি নেই।
চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, মেয়েটি সম্ভবত জঙ্গলে থাকাকালীন বাঁদরদের চেঁচাতে বা তাদের আচরণ লক্ষ্য করেছিল এবং সেটারই নকল করত। এই বয়সে বাচ্চারা যা দেখে তাই শেখে।
তবে শেল্টার কেন্দ্রে একই বয়সের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ওর বেশি সময় কাটানো ওর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তার গায়ে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ফলে শিশুটি কোনো বড় শারীরিক বা মানসিক আঘাতের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে কিনা তাও মূল্যায়ণ করে দেখা উচিত বলেও তারা মত দিয়েছেন।
১১/৪/২০১৭/অ/হা/