ডেস্ক রিপোর্ট ,বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৈশাখ মাস আসার বেশ আগেই বাংলাদেশে চলে আসে কালবৈশাখী। এ দেশে
মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে কালবৈশাখী সবচেয়ে বেশি আঘাত হানে। কালবৈশাখীর প্রচণ্ড দমকা ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত, বিদ্যুৎ চমক ও কখনোবা শিলাবৃষ্টির দেখা মেলে এবং এর ফলে আমাদের জানমালের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। কালবৈশাখীর উৎপত্তিস্থল প্রধানত কলকাতার ছোটনাগপুর এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলো। এটি মূলত উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ধাবিত হয়। ফলে উত্তর-পশ্চিম আকাশে কালো মেঘ দেখলেই কালবৈশাখীর আগমনী বার্তা পাওয়া যায় এবং তখনই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। কালবৈশাখীর স্থায়িত্ব সাধারণত ৫০ থেকে ৯০ মিনিট হয়ে থাকে।
হোলে ও লোপেজ (Holle and Lopez) কর্তৃক প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৩ সালে সারা পৃথিবীতে ২৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে ২০১২ সালে তা কমে ৬ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ সারা দুনিয়ায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের বজ্রপাতে মৃত্যুর প্রতিবেদন দেখে বলা যায়, বাংলাদেশে এ কারণে মৃত্যুর হার বেশ বেড়েছে। এ দেশে মার্চ-এপ্রিল-মে-জুন—এই চার মাসেই মূলত বড় ধরনের বজ্রপাতের আধিক্য দেখা যায়; অবশ্য জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বৃষ্টিবাদলের সময়টাতেও প্রচুর বজ্রপাত সংঘটিত হয়ে থাকে।
২ তারপরও অধিক সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আমাদের করণীয়গুলো নিম্নরূপ:
১. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় যাওয়া পরিহার করুন এবং জানালা বন্ধ রাখুন। বাড়ির ধাতব কল, রেলিং, পাইপ, গ্রিল ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
২. বজ্রপাতের সময় অবশ্যই যথাসম্ভব চোখ বন্ধ রাখুন এবং শিশুদের কানে তুলা দিন।
৩. বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির সংযোগ খুলে রাখুন।
৪. বজ্রপাতের আশঙ্কায় ধানখেত, খোলা জায়গা, পানি অথবা উঁচু স্থানে অবস্থান পরিহার করুন। অন্যথায় পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকুন।
৫. যত দ্রুত সম্ভব দালানঘর বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। কাঁচা ঘরবাড়ি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
৬. উঁচু গাছপালা ও ধাতব খুঁটি, মোবাইল ফোনের টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহারও পরিহার করুন।
৭. গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ পরিহার করুন।
৮. বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় নদী পারাপার এবং মাছ ধরা পরিহার করুন।
৯. প্রতিটি উঁচু বিল্ডিংয়ে বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপন করুন।
১০. নিয়মিত আবহাওয়া বার্তা শুনুন এবং তা মেনে চলুন।
বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে একটি দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এ খাতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে জানমালের ÿক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নিয়মিত আবহাওয়া বার্তার মাধ্যমে আমাদের সতর্ক করে যাচ্ছে। নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য এই দুর্যোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা, এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা এবং আঘাতপ্রাপ্ত হলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশে দুর্যোগে ভয় না পেয়ে এর মোকাবিলায় আমাদের মেধা ও শ্রম কাজে লাগানোই হতে পারে আমাদের জানমালের রক্ষাকবচ।
৯/৪/২০১৭/১২০/সা/ফা/