ডেস্ক রিপোর্ট ,বাংলারিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
সুন্দরবন থেকে আহরণকৃত গোলপাতা পাইকগাছায় বিক্রি জমে উঠতে শুরু করেছে। বনের গোলপাতা কাটা শেষ হয়েছে। এখন পরিবহণ, মজুদ ও বিক্রির পালা শুরু হয়েছে। পাইকগাছা উপজেলার নদ-নদী সংলগ্ন বিভিন্ন হাটবাজার ও মোকামে গোলপাতার মজুদ চলছে। পাইকগাছা পৌর বাজারে ট্রলার ঘাট, থানার সামনে, শিববাটী, আলমতলা, চাঁদখালী, চাঁদালী, আগড়ঘাটা, কপিলমুনি বাজারে গোলপাতার মজুদ ও বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে গোলপাতা সরবরাহ কম থাকায় অধিক মূল্যে গোলপাতা বিক্রয় হচ্ছে বলে ক্রেতারা জানিয়েছে।
গোলপাতা দেখতে গোল নয়, কিছুটা নারিকেল গাছের পাতার মতন। ঘরের চালে গোলপাতার ছাউনি উপকূলসহ বিভিন্ন জেলায় খুব জনপ্রিয়। এ পাতার ছাউনি ঘর গরমের সময় ঠা-া ভাব এবং শীতের সময় গরমভাব অনুভূত হয়। গোলপাতা দিয়ে ভালোভাবে ঘরের ছাউনি দিলে ৩-৪ বছর পার হয়ে যায়। উপকূলসহ যশোর, মাগুরা, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গোলপাতার চাহিদা রয়েছে। গোলপাতা খুচরা ও পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আড়ৎ থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রাক, ইঞ্জিন ভ্যান, ট্রলারযোগে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছে। গোলপাতা ব্যবসায়ী সূত্রে জানাগেছে, গোলপাতার মজুদ প্রায় শেষ এখন বিক্রির পালা। বিগত বছর গোলপাতার ব্যবসা ভালো ছিল না। এ বছর কিছুটা ব্যবসা হতে পারে বলে তারা ধারণা করছে। সবেমাত্র গোলপাতা বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রায় আষাঢ় মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে। তাছাড়া বৃষ্টি শুরু হলে গোলপাতার বিক্রি বেড়ে যাবে। স্থানীয় গোলপাতা ব্যবসায়ীরা সুন্দরবনে বাওয়ালী ও মহাজনের নিকট থেকে ট্রলার চুক্তি গোলপাতা ক্রয় করে স্থানীয়ভাবে বিক্রয় করে। এ বিষয়ে গোলপাতা ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান, মোতলেব সরদার, লেয়াকত, জিনারুল ইসলাম জানান, গোলপাতা পরিবহণের জন্য একটি নৌকা ২টি ট্রিপ দিতে পারে। বড় নৌকায় ব্যবসায়ীদের হিসাবে প্রায় ৯০-১০০ কাউন, ছোট নৌকায় ৭০-৮০ কাউন বহন করতে পারে। তারা জানায়, বনের গোলপাতা কাটা শেষ হয়েছে, কাটা গোলপাতা যা আছে তা বহন করা হচ্ছে।
এ বছর বন বিভাগের তদারকি জোরদার থাকায় ওজনের অতিরিক্ত গোলবহন করতে পারছে না। এ জন্য গোলপাতার মূল্য বেড়ে গেছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করছে। প্রতি নৌকায় ৯ জন বাওয়ালী গোলপাতা কাটা, আহরণ ও মজুদের কাজে নিয়োজিত থাকে। প্রতি বড় নৌকায় গোলপাতা বহনে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজির টাকা খরচ হয় এবং ছোট নৌকায় প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। নৌকা প্রতি গোল বিক্রি করে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। গোলপাতার হিসাবে খুচরা কাউন ৩২০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা ও পাইকারি ৩ হাজার টাকা থেকে ৩২শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৮০টি গোলে ১ পোন ২/৩ শত টাকা খুচরা বিক্রি হচ্ছে।
বাওয়ালী সূত্রে জানাগেছে, গোলপাতা কাটার পাশ পারমিট পেতে বিড়ম্বনা ও গোলপাতার মণপ্রতি ধার্য কর বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া জলদস্যুদের চাঁদা, মুক্তিপণ ও উপরি খরচ দিয়ে আগের মতো লাভ হচ্ছে না। তাছাড়া বনে আগের মতো ভালো মানের বড় গোলপাতা পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও ব্যবসায় টিকিয়ে রাখার জন্য জীবন বাজি রেখে গোলপাতা কাটতে হয়। তাছাড়া একটি বড় নৌকা তৈরি করতে ইঞ্জিনসহ আনুষঙ্গিক খরচ দিয়ে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। প্রতি বছর পুরোনা নৌকা মেরামত করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ সব খরচ মিটিয়ে গোলপাতা ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও মৌসুম শুরু হলে ব্যবসায়ীরা সকল বাধা অতিক্রম করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য গোলপাতা আহরণ করে চলেছে।
৩/৪/২০১৭/১৭০/তৌ/আ/